চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে কঠোর কর্মসূচি: বাম গণতান্ত্রিক জোট

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বামমোর্চা। সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি শাহ আলম। আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেল স্টেশন এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি শাহ আলম। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের পুরোনো রেলস্টেশন চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চাইছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো এখতিয়ার এই সরকারের নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোকে বন্দর ইজারা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য পরিষ্কার করার আহ্বান জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, এনসিপি ও জামায়াতকে তাদের বক্তব্য পরিষ্কার করতে হবে। তারা বন্দর ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কী ভাবছে, তা জনগণ জানতে চায়। এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি।

বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। ‘জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়া চলবে না’, এমন ব্যানারে কর্মসূচি পালিত হয়।

সমাবেশে সিপিবি নেতা শাহ আলম আরও বলেন, ‘দেশবিরোধী চক্রান্ত চলছে। মিয়ানমারে করিডর দেওয়ার আলোচনা আমরা শুনেছি। এখন বন্দর দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বন্দর রক্ষা করব।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারের চুক্তি করার কথা রয়েছে।

সরকারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে চলেছে বিভিন্ন সংগঠন। গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

আজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চুক্তি করতে চায়। বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে দেশীয় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যেন আগেভাগেই দায় এড়াতে পারে, সে জন্যই বন্দরের মাশুল ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

সমাবেশ থেকে জানানো হয়, কাল রোববার থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এ সময়ের মধ্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করা হবে। তাতেও সফল না হলে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

‘তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ইজারার সিদ্ধান্তও তারই অংশ। এখনই এ সিদ্ধান্ত থেকে না ফিরলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, সরকার নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের অঙ্গীকার থেকে সরে গিয়ে দেশবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। বন্দরের লাভজনক টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় বদনাম আছে।

গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন নাসু বলেন, ‘জনগণের মত ছাড়া কোনোভাবেই বন্দর ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার জনগণের মতের তোয়াক্কা না করেই সরকার বিভিন্ন চুক্তি করেছে। এই সরকার এনজিওবাদী সরকার। এরা সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কাজ করছে।’

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বাসদ (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি শেখ নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রেলস্টেশন চত্বর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত মশালমিছিল করেন অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা।