রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নদীপাড়ের বাসিন্দাদের উৎকণ্ঠা

তিস্তা নদীতে পানি বাড়ছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সংকরদহ এলাকায়
ফাইল ছবি: মঈনুল ইসলাম

উজান থেকে আবারও পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করায় রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ উঁচু স্থান বা বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ছুটে গেছেন, অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করছেন অনেকে।

আজ শনিবার বেলা পৌনে ১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুর কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ দুপুরে তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২১ মিলিমিটার। উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধিসহ কুড়িগ্রামের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

আরও পড়ুন

এর আগে ঈদের দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছিল। পানি বাড়ায় নদীতীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে আবারও নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে ছুটে যাওয়ার জন্য অনেকেই প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে চরাঞ্চলের মানুষজন জানিয়েছেন।

নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তাপাড়ের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের জেগে ওঠা বিনবিনা চর, গজঘণ্টা ইউনিয়নে জেগে ওঠা ছালাপাক চরসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক চরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মিয়া (৬০) বলেন, ‘প্রতিবছরই বন্যা হয়। কিন্তু এবার ঈদের আগে থেকে অন্তত পাঁচ দফায় নদীর পানি বাড়া-কমা করেছে। হঠাৎ করে কী যে হয়, তা বোঝা যাইতোছে না।’

আরও পড়ুন

একই এলাকার আবদুল জব্বার (৬০) বলেন, ‘পানি বাড়তোছে, ভাঙনও শুরু হইছে। গেল দুই বছরে অনেক জমি নদীত ভাঙি গেইছে। বসতভিটা আর অল্প কিছু আবাদি জমি আছে, সেটাও বুঝি এবার চলি যায়।’

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট চরাঞ্চালের মানুষজনও স্বস্তিতে নেই। এই চরের কিছু মানুষ ঈদের আগেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাঁধে অবস্থান নিয়েছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দিন থেকে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি বাড়ছে, আবার কমছে।

লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। চরাঞ্চলের মানুষকে সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুর, গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর এই দুই ইউনিয়নের মানুষজনের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন।

পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলে প্রতিদিনই তিস্তাসহ এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।