মুঠোফোন চোরের বিরুদ্ধে মাইকে ফায়েজ মিয়ার ‘গালিগালাজ’ কর্মসূচি

মুঠোফোন চোরের বিরুদ্ধে ফায়েজ মিয়ার মাইংকিং। মঙ্গলবার নিজ বাড়ির সামনে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের পানের দোকানদার ফায়েজ মিয়া (৬৫)। সপ্তাহখানেক আগে দিনদুপুরে তাঁর বাড়ি থেকে দুটি মুঠোফোন চুরি যায়। আগেও একাধিকবার ফোন খুইয়েছেন তিনি। ঘন ঘন ফোন চুরি যাওয়ায় তাঁর মনে জন্ম নেয় ক্ষোভ।

সেই ক্ষোভ মেটাতে অভিনব এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন ফায়েজ মিয়া। রীতিমতো তিন দিন ধরে হাটবাজারে মাইকিং করে চোরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে চলেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গ্রামে মুঠোফোন চুরি বেড়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বসতঘর কিংবা চলার পথে অনেকে মুঠোফোন খোয়াচ্ছেন। স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণা, গ্রামে মাদকসেবী বেড়ে যাওয়ায় ছিঁচকে চুরি বেড়েছে। চুরির মুঠোফোন বিক্রি করে নেশার ব্যয় মেটাচ্ছেন মাদকসেবীরা। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মুঠোফোন চুরির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফায়েজ মিয়াও একাধিকবার এমন চুরির শিকার। গত বুধবার তাঁর একটি স্মার্টফোন ও একটি অ্যানালগ ফোন বাড়ি থেকে একসঙ্গে চুরি হয়।

ফায়েজ মিয়ার স্বজনেরা জানান, চুরি হওয়ার পর তাঁরা বুঝতে পারেন, অন্য গ্রামের কেউ মুঠোফোন চুরি করেননি। নিজ এলাকার কেউ চুরি করেছেন। তাঁরা এ-ও নিশ্চিত ছিলেন, পুলিশে নালিশ করে তেমন লাভ নেই। আবার বিচার–সালিস করেও ফোন পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় ফায়েজ মিয়া সিদ্ধান্ত নেন, গ্রামে চোরের বিরুদ্ধে মাইকিং করবেন। গালমন্দ হবে কড়া ও অশালীনভাবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রোববার মাইক ভাড়া করে হাটবাজারে বের হয়ে যান। সেখানে অকথ্য ভাষায় ফোনচোরদের গালমন্দ করেন তিনি। পরদিনও একইভাবে চলে গালমন্দ কর্মসূচি। আজও বাড়ির সামনে মাইকে গালমন্দ চালিয়ে যান তিনি। ফায়েজের অশালীন গালমন্দ শুনে অনেকে বিরক্ত। আবার অনেকে তাঁকে স্বাগত জানান।

গজারিয়া পূর্বপাড়ার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ফায়েজ মিয়ার কথাগুলো কানে লেগেছে। প্রকাশ্যে শোনা কঠিন। তবে এর মধ্য দিয়ে মানুষের ক্ষোভের জায়গাটা প্রকাশ পেয়েছে। এ কথা সত্য প্রতিদিন অসংখ্য ফোন চুরি হচ্ছে। একটি ফোনে কত প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে। ফোন চুরি হলে অনেকে অসহায় হয়ে পড়েন। অথচ আমরা এর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছি না।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে ফায়েজ মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি দোকানে বসে ছিলেন। জিজ্ঞাসা করতেই প্রথমে বিব্রত হন। পরে তিনি বলেন, ‘চোরকে যখন ধরতে পারুম না, আবার ফোনও পামু না, তখন মনে হইছে, মন ভইরা বইক্কা লই। কারণ, চোর তো গ্রামের ভেতরেই আছে। আমার বিশ্বাস, এই বকাবকি চোর ও চোরের পরিবারের লোকজনের কানে গেছে। এই বকা হুনার পর ফোন চুরির স্বাদ মিটব।’

বিষয়টি ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলমের নজরে আনা হয়। তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানালেন। তবে এ-ও বললেন, এখনই খোঁজ নিয়ে দেখছেন।