ওএমএসের নারী ডিলারকে বাদ দিয়ে আ.লীগ নেতার ছেলেকে নিয়োগ

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নারীর খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রির ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেওয়া আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) পাওয়ার পর ওই নারীকে বাদ দিয়ে সেখানে এক আওয়ামী লীগের নেতার ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় একাধিক সূত্র জানায়, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহর বাজারের ওএমএসের ডিলার মেরিন জাহান। তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে ২২ অক্টোবর ডিও লেটার দেন। মনির সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহরাব সিকদারের ছেলে।

এর ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক একটি তদন্ত কমিটি করেন। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গতকাল রোববার মেরিন জাহানের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। একই দিন মনির হোসেনকে নতুন ডিলার নিয়োগ করে চিঠি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মেরিন জাহান রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। ওএমএসের চাল ও আটা বিতরণ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।

সোমবার মনোহর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ চাল ও আটা কেনার জন্য মেরিন জাহানের দোকানের সামনে ভিড় করেছেন। কিন্তু চাল, আটা না পেয়ে তাঁরা কিছু সময় অপেক্ষা করে ফিরে যান।

উত্তর মধ্যপাড়া এলাকার শাহীনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী বন বিভাগের কর্মচারী ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মেরিন জাহানের দোকান থেকে স্বল্প মূল্যের চাল-আটা নিয়ে সংসার চালাতাম। তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করার কথা শুনলাম। এটা অন্যায়।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্য একজন ডিলারের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে কিছু অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করে সেখানে অন্য এক ব্যবসায়ীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, সংসদ সদস্য ডিলার নিয়োগ কমিটির উপদেষ্টা। তাঁর পরামর্শ ও মতামত নিয়ে ডিলার নিয়োগ সম্পন্ন করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে। পরিপত্রেও এমন উল্লেখ আছে। তাঁর ডিও লেটার পাওয়ার পর তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি করার জন্য শরীয়তপুর পৌর এলাকায় ১০ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। প্রতিদিন ৫০০ কেজি করে চাল ও ৫০০ কেজি করে আটা বিক্রি করেন ডিলাররা। সপ্তাহে পাঁচ দিন এ কার্যক্রম চলে। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি পাঁচ কেজি করে চাল বা আটা কিনতে পারেন।