পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়ার একাংশ) আসনে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু সাইয়িদ। আজ রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক। টানা তিনবার তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবু সাইয়িদ বলেন, অস্ত্রধারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। ডেপুটি স্পিকার এখনো পুলিশ প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনের মাঠে ঘুরছেন। তিনি ইচ্ছেমতো প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। বিষয়গুলো জানিয়ে এবং অস্ত্রধারীদের ছবিসহ নির্বাচন কমিশনে অন্তত ১২টি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন তাঁরা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেছেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ হতে পারে না।
আবু সাইয়িদ আরও বলেন, ‘বেড়া-সাঁথিয়ার মানুষ একজন ব্যক্তি কর্তৃক নির্যাতিত। আমি তাঁদের জন্য ভোট করতে এসেছি। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য আসিনি। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করলে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। তখন কোনো অঘটন ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। এ দায় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আবু সাইয়িদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুল হকের ভাই আবদুল বাতেন অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাঁদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। প্রচারে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। গাড়িবহর থামিয়ে মারধর করা হচ্ছে। তবে কিছুতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে গণজোয়ার থামানো যায়নি। সর্বশেষ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাঁথিয়া থানায় বিস্ফোরক আইনে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলায় তিনিসহ (আবু সাইয়িদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আবদুল বাতেন) সম্ভাব্য এজেন্ট ও কর্মী-সমর্থকদের আসামি করা হয়েছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমরা নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করতে আসিনি। ব্যক্তির বিপক্ষে নির্বাচন করছি। বেড়া-সাঁথিয়ার মানুষকে জিম্মিদশা থেকে মুক্তির জন্য নির্বাচন করছি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চেয়েছেন। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। কিন্তু পদে পদে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। হামলা-মামলা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুল হক বলেন, ‘সাইয়িদ সাহেবের নেতৃত্বে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা শুধু নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন নয়, সামাজিক গুরুতর অপরাধ। আমার ৮-৯ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছিল। আমি তাদের বিরত রেখেছি। আমি থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের প্রতিটি বিষয় সরাসরি নির্বাচন কমিশন দেখছে। তাই নির্বাচন নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। প্রত্যেক প্রার্থীকে সমান দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে শুধু মামলা হলেই হবে না, পুলিশ মামলা তদন্ত করেই ব্যবস্থা নেবে। সাঁথিয়ায় যে মামলা হয়েছে, সেটির তদন্ত চলছে।