গাইবান্ধায় ভাসানী সেতুর উদ্বোধন
আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার: আসিফ মাহমুদ
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, বিগত দিনে কিছু কিছু অঞ্চল আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে উত্তরাঞ্চল অন্যতম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়েছে এবং আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
বুধবার বেলা তিনটায় গাইবান্ধার বহুল প্রত্যাশিত মাওলানা ভাসানী সেতুর (হরিপুর তিস্তা সেতু) উদ্বোধনের পরে মতবিনিময় সভায় আসিফ মাহমুদ এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে উপদেষ্টা বিমানযোগে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর আসেন। সেখান থেকে সড়কপথে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এসে ভাসানী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে সেতু-সংলগ্ন হরিপুর খেয়াঘাট এলাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন মাওলানা ভাসানীর নামে। আপনারা জানেন তিনি এ অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭৬ সালে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য মাওলানা ভাসানী লংমার্চের ডাক দিয়েছিলেন। সেই লংমার্চ থেকে পরবর্তী সময় এবং আজ পর্যন্ত আমরা অনুপ্রেরণা পাই, আগ্রাসনবিরোধী সব লড়াই লড়ে যাওয়ার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও আমরা তিস্তাসহ সীমান্তবর্তী ও ভারতের সঙ্গে যেসব নদী রয়েছে, সেগুলোর ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারিনি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশীদ মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুর রহিম, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ, গাইবান্ধা জুলাই যোদ্ধার সহসভাপতি আশিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম অংশে তিস্তা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ঘাট পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, ছোট-বড় ৬২টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ ও সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসন মিলিয়ে মোট ব্যয় হয় ৯২৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটি দুই লেনের এবং মোট ৩১টি স্প্যান। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’ এ কাজের দায়িত্ব পায়। সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড) অর্থায়ন করে।
এলজিইডির গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় কাজ এই সেতু। সেতুটি চালু হওয়ায় কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৯৩ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এলাকায় নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
সেতু চালু হওয়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস
মাওলানা ভাসানী সেতু চালু হওয়ায় গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ উচ্ছ্বসিত। বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণে সেতু এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
সুন্দরগঞ্জের তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শরিয়ত উল্যা মাস্টার বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য মিছিল-সমাবেশসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দাবি জানিয়েছেন। অবশেষে এলাকাবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো।
গাইবান্ধায় পৈতৃক নিবাস মনজুরুল ইসলামের। বাবার চাকরির কারণে এখন তিনি কুড়িগ্রামের বাসিন্দা। মনজুরুল মুঠোফোনে জানান, কুড়িগ্রামের মানুষকে বাসে রংপুর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। সেতু চালু হওয়ায় এখন চিলমারী হয়ে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে যাতায়াত করলে প্রায় ৯৩ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। সময় বাঁচবে দুই ঘণ্টা।
গাইবান্ধা জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদার রহমান বলেন, মাওলানা ভাসানী সেতু চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ গাইবান্ধা শহরের ভেতর দিয়ে ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। এতে গাইবান্ধায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে উন্নতি হবে।