চৌদ্দগ্রামে চুরির অপবাদে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চুরির অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে এক যুবককে নির্যাতন
ছবি: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে নেওয়া

উন্মুক্ত জলাশয়ে টেঁটা দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের যুবক নুরুল আলম (২২)। সেখানে থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে বাঁধা হয় গাছের সঙ্গে। পরে চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। ওই যুবককে এভাবে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের উত্তর যাত্রাপুর গ্রামে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আজ রোববার বিকেলে আবুল হাসেম নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উত্তর যাত্রাপুর গ্রামের নুরুল আলমের বাবা আবুল হাসেমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার ইসমাইল মিয়া ও শফিক মিয়া ওরফে বাচ্চু মিয়ার মধ্যে সম্পত্তির বিরোধ চলছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার ভোরে নুরুল আলম বাড়ির পাশের খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে টেঁটা দিয়ে মাছ ধরতে গেলে তাঁকে বাচ্চু মিয়ার নিকটাত্মীয় স্বপন মিয়া ও সোহেল মিয়া জোর করে ধরে এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তিও ইসমাইল মিয়া ও শফিক মিয়ার আত্মীয়। ওই বাড়িতে স্বপন ও সোহেল আমগাছের সঙ্গে বেঁধে নুরুল আলমকে পেটাতে থাকেন। গতকাল ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে নির্যাতন। নুরুল আলমকে নির্যাতন করে একপর্যায়ে মসজিদের মাইকে চোর ধরা হয়েছে বলে ঘোষণা দেন তাঁরা। নির্যাতনে নুরুল আলম একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাইদ আল মুনসুর (ইনাম) বলেন, নুরুল আলমের পায়ের তালু, হাতের তালুতে মারাত্মক জখম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমকে আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন স্বপন মিয়া। দুই হাত দিয়ে এবং পরে জুতা দিয়ে পেটান সোহেল মিয়া। ৪২ সেকেন্ডের মধ্যে নুরুল আলমকে অন্তত ৩৯টি আঘাত করা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন। কিন্তু কেউই নুরুল আলমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।

নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের বাবা আবুল হাসেম বলেন, জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধকে কেন্দ্র করে তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

এদিকে যে বাড়িতে নুরুল আলমকে নির্যাতন করা হয়েছে, সেই বাড়ির মালিক আবুল হাসেমকে পুলিশ আটক করেছে। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অপর ব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আজ সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহামেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুরুল আলমকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। পরে অভিযান চালিয়ে আবুল হাসেমকে (নির্যাতনকারীদের আত্মীয়) আটক করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, আবুল হাসেম দাবি করেছেন, তাঁর বাড়ির মুরগি চুরির চেষ্টা করায় নুরুল আলমকে আটক করা হয়েছিল। তবে প্রাথমিক তদন্তে এই দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।