টাঙ্গাইলের নাগরপুরে যমুনার ভাঙনে গৃহহীন আড়াই শতাধিক পরিবার

নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চলে এসেছে। পুরোনো ভবনের নিচের কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে।

যমুনার ভাঙনে হুমকির মধ্যে পড়েছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন। ভবনের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। ১৪ জুন দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের আড়াই শতাধিক বসতবাড়ি এ বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন মানুষ আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা দেয়াল (গাইড ওয়াল) নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার নাগরপুরে ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো হচ্ছে সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল; ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা ও কৃষ্ণ দিয়ার কুল; দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক ও ছিটকি বাড়ি। দেড় মাস ধরে নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

গত বুধবার সরেজমিন সলিমাবাদ ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চলে এসেছে। বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের নিচের কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে। যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের আশপাশে অস্থায়ী ঘর তুলে অবস্থান করছে ভাঙনকবলিত কিছু পরিবার।

সেখানে আশ্রয় নেওয়া পশ্চিম সলিমাবাদের আবদুল আউয়াল মোল্লা জানান, কয়েক বছরের ভাঙনে তিনি জমিজমা সব হারিয়েছেন। এবার বসতবাড়িও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর মতো অনেক পরিবার সব হারিয়ে পথে বসেছে।

পশ্চিম সলিমাবাদ গ্রামের মজিদা খাতুনের বাড়ি পাঁচবার নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। সব হারিয়ে তাঁর স্বামী এখন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান। মজিদা খাতুন বলেন, ‘নদী আর যেন না ভাঙে, তার জন্য একটা সমাধান চাই।’

চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুস সামাদ বলেন, দুই মাস আগেও স্কুল থেকে নদী অনেক দূরে ছিল। এবার ভাঙতে ভাঙতে স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে। প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ না করলে এ এলাকা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক পরিবার সম্প্রতি গৃহহীন হয়েছে। এ ছাড়া চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারখানেক মানুষ। প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনে মানুষ গৃহহীন হচ্ছেন। ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সলিমাবাদ ও ধুবরিয়া ইউনিয়নে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। বন্যা মৌসুম পার হওয়ার পর এই প্রকল্পের আওতায় নাগরপুর অংশের কাজ করা হবে।