সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হত্যাচেষ্টার মামলায় সাক্ষ্য দিলেন আরও ৪ জন
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা এবং সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টার মামলায় চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ১৩ মে ধার্য করেছেন আদালত।
আজ বুধবার দুপুরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক স্বপন কুমার সরকারের আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ৩০ এপ্রিল দুই মামলায় ৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টার মামলায় তিনজন এবং শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার জামিনে থাকা আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গৌছ আইনজীবীদের মাধ্যমে সময় চেয়েছেন। তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁরা জামিনে রয়েছেন। কারাগারে থাকা আসামিরা আদালতের সাক্ষ্য গ্রহণকালে উপস্থিত ছিলেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে একটি জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত এবং আহত হন অন্তত ৭০ জন।
ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ওই অভিযোগপত্রের বিষয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলা পুনর্তদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত কিবরিয়ার পরিবার।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
এ মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক এবং হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গৌছ, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৩ জন জামিনে রয়েছেন। বাকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং মিজানুর রহমান মিটু, হাফেজ সৈয়দ নাঈম আহমদ ওরফে আরিফ ওরফে নিমু, মাওলানা শেখ ফরিদ আহমদ, আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট, আবু জান্দালসহ অন্যরা কারাগারে রয়েছেন। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিবরিয়া হত্যা মামলায় ১৭১ জন সাক্ষী। তাঁদের মধ্যে মোট ৬৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এদিকে ২০০৪ সালের ২১ জুন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জের দিরাইবাজারে একটি সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। গ্রেনেড বিস্ফোরণে যুবলীগের এক কর্মী ঘটনাস্থলে নিহত এবং ২৯ জন আহত হন। ওই ঘটনায় দিরাই থানার উপপরিদর্শক হেলাল উদ্দিন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর লুৎফুজ্জামান বাবর, আরিফুল হক চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় ১২৩ জন সাক্ষী রয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।