গোলাবর্ষণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠল টেকনাফ-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরাফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় আবারও ভারী বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল শনিবার রাতভর সেখানে বিমান হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে সীমান্তে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বিকট শব্দে আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। ওপারের মর্টারশেল ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমান্ত এলাকাগুলো কেঁপে উঠেছে। তবে ওপারের কোনো গোলা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ার খবর পাওয়া যায়নি।

শনিবার রাতভর রাখাইন রাজ্যে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা। তিনি বলেন, গতকাল রাত ১১টা থেকে আজ রোববার রাত ৩টা পর্যন্ত ওপারে থেমে থেমে মর্টারশেল ও বোমার বিকট শব্দ শোনা গেছে। তখন হোয়াইক্যং সীমান্তের কিছু এলাকা কেঁপে ওঠে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়ন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। অনেকে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান দখলদার দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির অবস্থানে শনিবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিমান হামলা চালায় জান্তা বাহিনী। আরাকান আর্মিও পাল্টা হামলা চালায়। ভোররাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সীমান্ত পিলার বিআরএম-১৮ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে এবং শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক ১৩ কিলোমিটার ভেতরে রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার এলাকায় বিস্ফোরণের ঝলক দেখা গেছে। সেখানে আরাকান আর্মির সদর দপ্তর রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বলিবাজারের বিপরীতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পড়েছে। জান্তাশাসিত মিয়ানমারে ৫ বছর পর ভোট গ্রহণ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে রাখাইনে নতুন করে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেল।

ওপারে গোলাগুলি বিষয়ে জানতে চাইলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন বলেন, হোয়াইক্যং বিওপি এলাকার নিকটবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতরে কোনো কিছু হয়নি। তারপরও নাফ নদী ও বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। ওপারের সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

উখিয়ার রহমতের বিল গ্রামের ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন বলেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। তাতে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, পাথরকাটা ও চাকমা পাড়া সীমান্ত এলাকায়ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। টেকনাফের উলুবনিয়া, খারাংখালী, হোয়াইক্যং, লম্বাবিল ও তেচ্ছি ব্রিজ এলাকা, উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া, নলবনিয়া, রহমতের বিল ও ধামনখালী সীমান্ত এলাকাতেও বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত জনপদের বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘ বিরতির পর ১৩ ডিসেম্বর রাতে রাখাইন রাজ্যে থেমে থেমে মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। তখন কয়েকটি গুলি বাংলাদেশি সীমান্তের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের ও ধানখেতে এসে পড়েছিল। ১৭ ডিসেম্বর রাতেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে রাখাইন রাজ্যের দখলদার সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির অবস্থানে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে সেখানকার সরকারি বাহিনী। আবার আরাকান আর্মির সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে মিয়ানমারের তিনটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) ও রোহিঙ্গা নবী হোসেন বাহিনী।