ভলিবলে দেশসেরা মোর্শেদা 

ভলিবলে দেশসেরা কিশোরীর নাম মোর্শেদা খাতুন। ডাকনাম বীথি। তার বাড়ি পাবনা সদরে। তার ক্রীড়ানৈপুণ্যে পাবনা জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

মোর্শেদা খাতুন

বাবা নৈশপ্রহরী আর মা গৃহিণী। বাড়িতে ভাঙাচোরা টিনের ঘর। টানাপোড়েনের সংসারে বেড়ে ওঠা মেয়েটির। অভাবের কারণে পড়ালেখার খরচ চালাতে কষ্ট হয় মা-বাবার। কিন্তু ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, নিয়মিত অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রমে এখন সে একজন সফল ভলিবল খেলোয়াড়। অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ভলিবলে নিজ জেলাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিরল সম্মান এনে দিয়েছে। আর নিজে অর্জন করেছে দেশসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব।

ভলিবলে দেশসেরা এই কিশোরী খেলোয়াড়ের বয়স মাত্র ১৪ বছর। নাম মোর্শেদা খাতুন। ডাকনাম বীথি। এ নামেই ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত সে। 

বীথি পাবনা জেলা সদরের রাধানগর বাগানপাড়া মহল্লার আজিজুর রহমান ও বুলবুলি খাতুন দম্পতির একমাত্র সন্তান। শহরের আদর্শ গার্লস উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ভলিবলে তার সাফল্যে গর্বিত মা–বাবা ও প্রতিবেশীরা। অজপাড়াগাঁয়ের এই কিশোরীর সাফল্যের কথা প্রধানমন্ত্রীও জানতে পেরেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বীথির পরিবারকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে একটি পাকা ঘর। 

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে অনূর্ধ্ব-১৫ আন্তবিভাগীয় মহিলা ভলিবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় পাবনা জেলা চ্যাম্পিয়নের শিরোপা অর্জন করে। আর বীথি দেশসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়।

জানতে চাইলে মোর্শেদা খাতুন বীথি জানায়, ‘ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় তার আগ্রহ। প্রথমে সে ব্যাডমিন্টন খেলত। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় সে বেশি দিন ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেনি। পরে প্রশিক্ষকদের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা শুরু করে। প্রায় তিন বছর আগে রাজশাহীতে সেসব খেলাধুলায় সে বেশ ভালো করে। তার ক্রীড়ানৈপুণ্য নজরে পড়ে জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা খাতুনের। তিনিই দুই বছর আগে বীথিকে জেলা মহিলা ভলিবল দলে যুক্ত করেন। সেই থেকে বীথি নিয়মিত ভলিবল চর্চা করছে।’ 

বীথি প্রথম আলোকে বলে, মেয়ে হয়ে ভলিবল খেলায় অনেকে কটুকথা বলেছেন। পারিবারিক অসচ্ছলতাও ছিল। কিন্তু আমি খেলাটা ছাড়িনি; প্রশিক্ষকদের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুশীলন চালিয়ে গেছি। এখন সবাই খুশি। 

বীথি এখন স্বপ্ন দেখে মা–বাবার স্বপ্ন পূরণের। সে বলেছে, ‘আমার মা–বাবার তো ছেলেসন্তান নেই। আমি মেয়ে হয়ে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। একটা সরকারি চাকরি করে মা–বাবার পাশে দাঁড়াতে চাই, তাদের দুঃখ দূর করতে চাই। দেশের হয়ে খেলে যেতে চাই।’

সম্প্রতি বীথিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোরা দুটি টিনের ঘর নিয়ে বীথিদের বাড়ি। এর একটি ঘরে মা–বাবার সঙ্গে থাকে বীথি। ঘরটির এক কোনায় বীথির পড়ার টেবিল। সেখানে বইয়ের সঙ্গে সাজানো বীথির সাফল্যের স্বীকৃতিগুলো। 

বীথির মা বুলবুলি খাতুন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি বীথির প্রচণ্ড ঝোঁক। এ জন্য মেয়েটিকে বহু মানুষ বহু কথা শুনিয়েছে। মেয়েটা মন খারাপ করে থাকত। কিন্তু থেমে যেত না। মনোবল শক্ত করে আবার খেলতে যেত। শক্ত মনোবলের জন্যই সে ভালো করেছে। মেয়ের সাফল্যে আমরা খুশি।’ 

বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘মেয়ের ভালো খেলায় আমি খুশি। খবরডা যে শুনছে, সেই খুশি হইছে। সগলে কইছে মেয়ে দেশের গর্ব। শুনে ভালো লাগিছে। মেয়েডা দেশের জন্যি আরও ভালো কিছু করবি, সিডাই চাচ্ছি।’

জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হোসনে আরা খাতুন বলেন, ‘বীথির মধ্যে প্রতিভা আছে। ইচ্ছাশক্তি আছে। সে ভলিবলে ভালো করবে। সেখান থেকেই তাকে অনূর্ধ্ব-১৫ জেলা মহিলা ভলিবলে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে যেমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সে ঠিক সেভাবেই ভালো করেছে। আমার মেয়েটির জন্য গর্বিত। আশা করি ভবিষ্যতে বীথি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় সুনাম কুড়িয়ে আনবে।’