নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িত থাকায় আশুগঞ্জের দুজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দুই মাসের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে চাকরিবিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে কর্মস্থলে চিঠি দিয়েছে ইসি। আগামী সাত দিনের মধ্যে কর্মস্থল থেকে গৃহীত পদক্ষেপের কথা ইসিকে জানানোর কথা বলা হয়েছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের গত মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। আজ শনিবার তাঁদের বরখাস্তের চিঠিটি জানাজানি হয়।

আরও পড়ুন

উপনির্বাচনে দুই আসনের তিন কেন্দ্রে অনিয়ম পেয়ে ব্যবস্থা নিল ইসি

বরখাস্ত হওয়া ওই দুই কর্মকর্তা হলেন আশুগঞ্জের আব্বাস উদ্দিন খান সোহাগপুর মডেল কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হোসেন মো. হাবিবুর রহমান এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আশুগঞ্জ শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। এর মধ্যে হাবিবুর রহমান আশুগঞ্জের যাত্রাপুর নূরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন এবং শফিউল্লাহ আশুগঞ্জের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১-এর ৫ ধারা অনুযায়ী অসদাচরণের দায়ে ওই দুই কর্মকর্তাকে ১৫ নভেম্বর ২০২৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত দুই মাস চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিয়েছে ইসি। একই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদেশ মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় গৃহীত ব্যবস্থা সাত দিনের মধ্যে ইসিকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

আরও পড়ুন

অনিয়মের তদন্ত শুরু ২ কমিটির, প্রথম দিনে ৯০ জনের বক্তব্য গ্রহণ

পৃথক দুই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ৫ নভেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর নূরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পৃথকভাবে তদন্ত করিয়েছে ইসি। উভয় প্রতিবেদনে প্রকাশিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ৭ নভেম্বর ইসির এক চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারকে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ভোটে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম অনিয়ম তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে নির্দেশ দেন। তাঁরা ৮ ও ৯ নভেম্বর তদন্ত করে ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেন।

আরও পড়ুন

দুই আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট স্থগিত

তবে সরাসরি অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই উপনির্বাচনের কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশুগঞ্জের কয়েকজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ভোটে অনিয়মের বিষয়ে যাত্রাপুর নূরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে অনিয়মের ছবি প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। সরকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জিয়াউল হক মৃধা পান ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট। পরে অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসলে নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত করে ইসি। অনিয়ম তদন্তের পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

আরও পড়ুন

‘সিল মারো ভাই সিল মারো, নৌকা মার্কায় মারো’