টাঙ্গাইলে নিহত শ্রমিক নুর ইসলামের স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চালকলের বয়লার ধসে নিহত তিন শ্রমিকের দাফন কুড়িগ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটায় জানাজা শেষে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ওয়াবদা বাজার কবরস্থানে দুজনকে ও একজনকে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।

নিহত শ্রমিকেরা হলেন সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নুর ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের মোহাম্মদ আরিফ (২৮) ও নাইমুল ইসলাম (৩২)।

আরও পড়ুন

টাঙ্গাইলে চালকলের বয়লারধস, তিন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল গফুর বলেন, নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলামকে লাশ আনতে গতকাল সোমবার টাঙ্গাইলে পাঠানো হয়। তিনি আজ ভোরে তিনজনের লাশ নিয়ে কুড়িগ্রামে আসেন। সকাল আটটায় যাত্রাপুর ইউনিয়নের নুর ইসলামের জানাজায় তিনি অংশ নেন।

পাঁচগাছি ইউপির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আরিফ ও নাইমুলের বাড়ি পাশাপাশি। সম্পর্কে তাঁরা তাঁর চাচাতো ভাই ও ভাতিজা। দুজনের বাড়িতে জানাজা শেষে ওয়াপদা বাজার কবরস্থানে তাঁদের লাশ দাফন করা হয়। তিনি বলেন, তিনজন শ্রমিকই খুব দরিদ্র। চালকলের বয়লার ধসে মারা গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। তিনি মালিকের কাছে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।

আরও পড়ুন

চালকলে বয়লার ধসে নিহত তিন শ্রমিকের লাশ হস্তান্তর, তদন্ত কমিটি

যাত্রাপুর ইউপির সদস্য জাহেদুল ইসলাম জানান, লাশ আনার সময় টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক তিনজনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেন। সেই টাকা নিহত ব্যক্তদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহত শ্রমিকদের দাফনের সময় স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত শ্রমিক আরিফের বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘কেমন করি বাঁচমো। একনা ছাওয়া তাই চলে গেল। পোয়াতি (গর্ভবতী) বউটার মুখের দিকে তাকান যায় না। নাওয়া-খাওয়া ছাড়ি দিছে। ছাওয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনি উয়ার মাও বিছনা নিছে। খালি বাবা বাবা বলি ডাকে আর কান্দে।’

নুর ইসলামের স্ত্রী সালমা বেগম স্বামীর শোকে শয্যাশায়ী। তিনি আহাজারি করতে করতে বলছেন, ‘তোমরা মোর স্বামীক আনি দ্যাও।’ নাইমুলের বাড়িতেও একই অবস্থা। তাঁরা এ ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আতাউল গণি প্রথম আলোকে বলেন, চালকলের বয়লার ধসের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন দেবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে নিহত শ্রমিকদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার বিকেলে টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার ডুবাইল এলাকায় একতা অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের চালকলে নতুন ক্রাশার লাগানো হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিকট শব্দে এক হাজার মণ চালসহ নতুন ক্রাশার ও বয়লার ধসে পড়ে। এ সময় কুড়িগ্রামের কর্মরত তিন শ্রমিক নিহত হন।