আখাউড়া স্থলবন্দর
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির অভিযোগ
ঋণপত্রে পাথরচূর্ণ আমদানির কথা বলে পাথরের ধুলা আনায় তা খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।
■ ২ হাজার ৭০০ টন পাথরের ধুলা (ডাস্ট) আমদানি করা হয়েছে।
■ এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনের আমদানি পণ্যের তালিকায় স্টোন ও বোল্ডার লেখা আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করায় দুই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বন্দর দিয়ে পাথরচূর্ণ বা ব্রোকেন অর ক্রাস্টড স্টোনের ঘোষণা দিয়ে ২ হাজার ৭০০ টন পাথরের ধুলা (ডাস্ট) আমদানি করা হয়েছে। ঋণপত্রে পাথরচূর্ণ আমদানির কথা বলে পাথরের ডাস্ট (ধুলা) আনায় তা খালাসের অনুমতি দিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ওই পণ্য এক মাস ধরে আখাউড়া স্থলবন্দরে পড়ে রয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। তবে চট্টগ্রাম, বেনাপোলসহ অন্যান্য বন্দর দিয়ে একই ধরনের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনের ৪২ নম্বর ধারায় আমদানি পণ্যের তালিকায় স্টোন ও বোল্ডার লেখা রয়েছে। তবে স্টোনের কোনো আকার উল্লেখ করা হয়নি। তিনি জানান, ছাড়পত্র না দেওয়ায় প্রতিদিন তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ৪০০ টন পাথরচূর্ণ আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক দফায় বন্দরে ২ হাজার ৭০০ টন পাথরচূর্ণ আমদানি করে এনে রাখে।
জানা গেছে, প্রথমবারের মতো পাথরচূর্ণ ঘোষণা দিয়ে আমদানি হওয়া এসব পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরীক্ষা করে পাথরচূর্ণের বদলে পাথরের ধুলা আমদানি করায় তা আটকে দেওয়া হয়। এতে বন্দরে পণ্য রাখার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন বন্দর কর্তৃপক্ষকে মাশুল হিসেবে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
এ ঘটনায় ৭ ডিসেম্বর আখাউড়ার স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজকেও কারণ দর্শানোর বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আমদানি করায় পণ্যের চালানটি বাজেয়াপ্তসহ তাদের প্রতিষ্ঠানের (এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটিডে এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না কেন জানতে চাওয়া হয় এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আখাউড়া শুল্ক স্টেশনের কারণ দর্শানোর চিঠি সূত্রে জানা গেছে, এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের পণ্য খালাসের জন্য তাদের মনোনীত আখাউড়ার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খলিফা এন্টারপ্রাইজ শুল্কায়নের জন্য স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। আখাউড়া স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও তিনজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আমদানিসংক্রান্ত দলিল পর্যালোচনা ও সরেজমিনে পরীক্ষা করে পণ্যটি শূন্য দশমিক ১ মিলিমিটার থেকে শূন্য দশমিক ৬ মিলিমিটার আকারের পাথরের ধুলা (স্টোন ডাস্ট) হিসেবে পান। ঘোষিত পণ্য পাথরচূর্ণের (ব্রোকেন ডাস্ট অর ক্রাস্ট স্টোন) সঙ্গে বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের কোনো মিল পাওয়া যায়নি, যা কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯–এর ধারা ৩২ মোতাবেক মিথ্যা ঘোষণার অপরাধের আওতায় পড়েছে।
এ বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স খলিফা এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সব আনার পর অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এখন বলা হচ্ছে, এ ধরনের পাথরের ধুলা আনার অনুমতি নেই। এখন পাথর আটকে থাকায় আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’
আখাউড়া স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে আমদানি করা পণ্য ডাস্ট হিসেবে পাওয়া গেছে। এ ধরনের পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি নেই। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।