মেলায় উঠেছে ‘বাহাদুর’ ঘোড়া, দাম হাঁকা হচ্ছে আট লাখ টাকা

জয়পুরহাটের গোপীনাথপুর দোল পূর্ণিমা মেলায় ঘোড়া উঠেছে। বাহাদুর নামের বড় আকৃতির ঘোড়াটি নজর কেড়েছে সবারছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলা গত সোমবার শুরু হয়েছে। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমার দিন থেকে মেলাটি বসে। ১৩ দিনব্যাপী এই মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়ার মেলা। এবারও এই মেলায় বাহারি নামের বিভিন্ন ঘোড়া এসেছে। মেলায় অনেক ঘোড়ার মধ্যে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে ‘বাহাদুর’ নামের ঘোড়াটি। মালিক ঘোড়াটির দাম হাঁকছেন আট লাখ টাকা।

তবে এখন পর্যন্ত বাহাদুরের দাম চার লাখের বেশি কেউ বলেননি। দর্শনার্থীরা ঘোড়া দেখতে দোলপূর্ণিমা মেলায় ছুটে আসছেন। মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে ফাঁকা মাঠে ঘোড়দৌড় দেখানো হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত ঘোড়ার মেলা চলবে।

জনশ্রুতি আছে, গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলার বয়স ৫১৭ বছর। তখন থেকে এখন পর্যন্ত মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা হয়ে আসছে। করোনার সময় দুই বছর মেলা বসেনি। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা মেলায় প্রচুর ঘোড়া আনা হয়। মেলায় ঘোড়া কেনাবেচাও ভালো হয়।

মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় ঘোড়া ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি। ক্রেতারা ঘোড়ার দামাদামিও করছেন। মেলায় বিভিন্ন জাতের ঘোড়া আনা হয়েছে। এর মধ্য পঙ্খিরাজ, বাহাদুর, বিজলি, কিরণমালা, বাংলার রানি, সুইটি ঘোড়া উল্লেখযোগ্য। দর্শনার্থীরা মেলায় ঘুরে ঘুরে ঘোড়া দেখছেন। তবে ভারতের তাজি জাতের সাদা-লাল রঙের বিশাল দেহের ‘বাহাদুর’ লেখা ঘোড়াটি দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। এটি এবারের মেলায় সবচেয়ে বড় ঘোড়া।

বাহাদুর ঘোড়ার মালিক নওগাঁর ধামুইরহাটের মজিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাহাদুরের বয়স পাঁচ বছর। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি দৌড়ায়ও ভালো। এই ঘোড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। এসব প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছি। বাহাদুরকে অনেক যত্ন করে পুষেছি। বাহাদুরের দাম আট লাখ টাকা চেয়েছি। অনেকেই দামাদামি করেছেন। এখনো কেউই চাহিদামতো দাম বলেননি। এ কারণে বাহাদুরকে বিক্রি করিনি। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে বাহাদুরকে বিক্রি করব না।’

আক্কেলপুর সিনিয়র মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা হিরো কবিরাজ বলেন, ‘আমি মেলায় ঘোড়া দেখতে গিয়েছিলাম। আমি বাহাদুর ঘোড়া দেখে কেনার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম। আমার কাছে বাহাদুরের দাম আট লাখ টাকা চেয়েছিল। সর্বশেষ বাহাদুরের দাম চার লাখ টাকা বলেছি। ঘোড়ার মালিক এ দামে বিক্রি করবেন না বলে আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।’

মেলায় আনা ঘোড়া
ছবি: প্রথম আলো

আট বছরের আয়ান হোসেন তার বাবা সাইদুর রহমানের সঙ্গে ঘোড়া দেখতে মেলায় এসেছিল। ছেলে এত বড় ঘোড়া দেখে খুব খুশি। বাবা সাইদুর রহমান বলেন, ‘একসময় ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে মেলায় আসতাম। তখন মেলায় আসা-যাওয়ার রাস্তা পাকা ছিল না। এখন রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। মানুষ কম সময়ে কম টাকায় মেলায় আসতে পারে। এ কারণে মেলায় আর ঘোড়ার গাড়ি আসে না। ছেলেকে ঘোড়া দেখাতে মেলায় নিয়ে এসেছিলাম। মেলায় বাহাদুর ঘোড়াটি দেখে খুব ভালো লেগেছে।’

পদাধিকার বলে গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলা কমিটির সভাপতি গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ঘোড়ার মেলা আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। তবে মূল মেলা আরও চলবে।

আক্কেলপু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলন, ‘যত দূর জেনেছি গোপীনাথপুর দোলপূর্ণিমা মেলাটি অনেক প্রাচীন একটি মেলা। এই মেলায় বড় বড় ঘোড়া এসেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলা কমিটিকে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রমজানের পবিত্রতা ও নিরাপত্তার জন্য বিনোদনমূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, প্রতিবছর গোপীনাথপুর মেলায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।