কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় পর্যটকবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় বাল্কহেডের সুকানি ও ইঞ্জিনচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নৌকাটি দ্রুত ও বেপোরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগ তুলে গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ভৈরব হাইওয়ে থানার কনস্টেবল সোহেল রানার বাবা মো. আলীম।
ভৈরব নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, মামলটি আশুগঞ্জ থানায় হলেও তদন্ত করছে ভৈরব নৌ পুলিশ। এরই মধ্যে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে দুর্ঘটনার সঙ্গে বাল্কহেডের সুকানি ও ইঞ্জিনচালকের অবহেলা আছে। এ কারণে তাঁদের শনাক্ত করে ধরার চেষ্টা চলছে।
মামলার বাদী মো. আলীম বলেন, ‘এটি দুর্ঘটনা নয়, আমি মনে করি হত্যাকাণ্ড। এই একটি ঘটনায় আমার সব শেষ হয়ে গেল। এই কারণে আমি দোষীদের বিচার চাই।’
এদিকে আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ডুবুরি দল। এ ঘটনায় এখনো ছয়জন নিখোঁজ আছেন। তাঁরা হলেন কনস্টেবল সোহেল রানা, তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ে ইভা বেগম, চার বছর বয়সী ছেলে রাইসুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ব্যবসায়ী বেলন চন্দ্র দে, তাঁর শ্যালকের স্ত্রী রুপা দে এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দরিগাও গ্রামের কলেজ পড়ুয়া আনিকা বেগম। নৌকাডুবির ঘটনায় এখন তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ সকালে মেঘনা নদীর ভৈরব প্রান্তের সেতু এলাকায় গিয়ে চর সোনারামপুর চরের কাছে উদ্ধার অভিযান চালাতে দেখা যায়। উদ্ধারকর্মীরা বলেন, ডুবে যাওয়া নৌকাটি গতকাল ছিল ৭০ ফুট পানির নিচে। আজ স্রোতের কারণে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। উদ্ধারের সুবিধার জন্য নৌকাটি টেনে চরের কাছে নেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নৌকাটি উদ্ধার হলে আরও লাশ বের হয়ে আসবে।
ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, গতকাল দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। আজ নিশ্চিত হওয়া গেছে লাশ দুটির একটি কনস্টেবল সোহেল রানার স্ত্রী মৌসুমী বেগমের (২৬) ও অপরটি ভৈরবের টুটুন দের মেয়ে সৃজিতা দের (১১)। গতকাল ধারণা করা হয়েছিল, লাশটি সোহেল রানার মেয়ে ইভা বেগমের।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা নদীর ভৈরব এলাকায় পাশাপাশি দুটি রেল ও একটি সড়কসেতু আছে। তিনটি সেতু ঘিরে ভৈরব প্রান্তে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মেঘনা নদীতে ঘুরে বেড়ান। গত শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে একটি নৌকায় ১৫ থেকে ১৮ জন ঘুরতে যান। মাঝনদীতে বালুবাহী বাল্কহেড নৌকাটিকে ধাক্কা দিলে সেটি ডুবে যায়।