স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে হবিগঞ্জে পাকিস্তানি নারী, করেছেন নির্যাতনের মামলা

হবিগঞ্জ জেলার মানচিত্র

মাহা বাজোয়ার (৩৫) নামের পাকিস্তানি এক নারী স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় এসেছেন। সেই সঙ্গে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে চুনারুঘাট থানায় মামলা করেছেন। এক মাস ধরে ওই নারী চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থান করছেন।

মামলায় অভিযুক্ত আসামি ও স্বামীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার (৩৫)। তিনি চুনারুঘাট পৌরসভার উত্তর বড়াইল এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট পৌরসভার উত্তর বড়াইল এলাকার শফিউল্লা মজুমদারের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার প্রায় ১০ বছর আগে দুবাইয়ে প্রবাসী ছিলেন। সেখানে পাকিস্তানের নারী মাহা বাজোয়ারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ২০১৪ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। পরে দুবাই থেকে দেশে ফিরে সাজ্জাদ আবার বিয়ে করে সংসার শুরু করেন।

মামলার এজাহারে মাহা বাজোয়ার দাবি করেন, তাঁর স্বামী সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। পাকিস্তানের শরিয়াহ আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালে ২ নভেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে তাঁদের বিয়ে হয়। ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশের হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার উত্তর বড়াইল এলাকায় স্বামী সাজ্জাদের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে আসেন। স্বামীর বাড়িতে প্রায় দুই মাস বসবাসের পর অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে যান। দেশে থাকা অবস্থায় তিনি জানতে পারেন, তাঁর স্বামী তাঁর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তাই তিনি স্বামীর সন্ধান করতে ও স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশে আসেন। স্বামীর বাড়িতে উঠতে চাইলে তাঁকে উঠতে দেওয়া হয়নি। বাড়ির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও তিনি আশ্রয় পাননি। পরে স্বামীর বড় ভাই স্বপন হোসেন মজুমদার তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দেন।

স্বপন হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আত্মীয়তার সূত্রে মাহাকে আমার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম। মাহার সঙ্গে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে সাজ্জাদের বিয়ে হয়। সাজ্জাদ জানিয়েছে, তাদের বিয়ে ভেঙে গেছে। মানবিকতা দেখিয়ে তাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি।’

এ বিষয়ে মাহা বাজোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এক মাস ধরে স্বামীর সন্ধানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর স্বামীর ভাবি তাঁকে সিলেটে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা শেষে গত বুধবার চুনারুঘাটে ফিরে জানতে পারেন সাজ্জাদ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেখানে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে সাজ্জাদ ও তাঁর স্বজনেরা তাঁকে মারধর করেন। এতে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতায় থানায় আসেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার মুঠোফোনে বলেন, তিনি ওই নারীকে মারধর করেননি। তাঁর বাড়িতে আসার সময় ঘরের একটি টিনশেডে মাথা লেগে তাঁর কপালের কিছু অংশ কেটে যায়। ওই কাটা অংশ দেখিয়ে তিনি অভিযোগ করছেন, তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে। ওই নারীর সঙ্গে ২০১৮ সালে তাঁর বিয়ে ভেঙে যায়। তাঁর আবার বিয়ে করার খবর পেয়ে এখানে এসে সংসার ভাঙার চেষ্টা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, ওই নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা হয়েছে। ওই নারী স্ত্রী হিসেবে স্বামীর স্বীকৃতি পেতে আদালতে আরও দুটি মামলার আরজি করেছেন। তবে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর দাবি, তিনি ২০১৮ সালে ওই নারীকে তালাক দিয়েছেন। পুলিশ দুই পক্ষের তথ্য খতিয়ে দেখছে।