পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ গোপালগঞ্জে গতকাল বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা–সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত রমজান কাজীর মা মর্জিনা বেগম। পাশে বসে মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন মর্জিনার মা রেহানা বেগম। তিনি বলেন, অভাবের সংসারে একমাত্র রোজগারের ব্যক্তি ছিলেন রমজান। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি রেহানা বেগমের। তিনি নাতি হত্যার বিচার চান।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিহত রমজানের মামা কলিম মুন্সি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ভাগনে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। সে কোনো দলের না। সে কী অপরাধ করেছে যে তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? রমজানের বাবা প্রতিবন্ধী, একবেলা ভ্যান চালান। রমজানের টাকায় সংসার চলত। এখন ওই সংসারের দায়িত্ব কে নেবে? অসহায় মা–বাবাকে কে দেখবে? ভিডিওতে দেখলাম, আমার ভাগনেকে গুলি করে মেরেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু বাবাটাকে বাঁচানো গেলে না। হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে গেলে থানার গেট বন্ধ পাই। পরে ময়নাতদন্তের জন্য থেকে লাশ আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু হাসপাতালের লোকেরা বলল, “আপনারা এখন বাসায় নিয়ে যান। এখানে সমস্যা হতে পারে।” লাশ ময়নাতদন্ত করাতে পারলাম না।’
রমজানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হরিনাহাটি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম কামরুল কাজী। তিনি ২০ বছর আগে গোপালগঞ্জে আসেন। গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক এলাকায় রমজানের পরিবার ভাড়া থাকে।
ছেলের পোশাক নিয়ে কাঁদছিলেন দীপ্তর মা
একই ঘটনায় নিহত দীপ্ত সাহার বাড়িতে বেলা আড়াইটার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের পোশাক নিয়ে স্মৃতিচারণা করছিলেন আর কাঁদছিলেন মা বিভা রানী সাহা। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে তিনি বলেন, ‘তোমরা কি আমার ছেলেকে এনে দিতে পারবে? যদি না–ই দিতে পারো, তাহলে কথা বলে কী লাভ? আমার ছেলেকে কেন মারা হলো? কী অপরাধ করেছে আমার ছেলে?’
নিহত দীপ্ত সাহা গোপালগঞ্জের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে। দীপ্তর ভাই সঞ্জয় সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই ভাই পোশাক ব্যবসায়ী। প্রতিদিনের মতো আমার ভাই দোকানে যান। শহরের অবস্থা খারাপ দেখে দোকান বন্ধ করে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাড়া খেয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে গেলে গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজ মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পেটের ডান পাশে গুলি লেগে বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমে আমার চাচাতো ভাই খবর পেয়ে অন্যদেরসহ ভাইকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আমার ভাইকে বাঁচানো গেল না।’
দীপ্ত সাহার লাশ বাসায় নিয়ে গতকাল রাতেই গোপালগঞ্জ পৌর মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বলে জানান সঞ্জয় সাহা।