মানিকগঞ্জ পৌরসভা
খালকে নাল দেখিয়ে ভরাট, বহুতল ভবন তৈরির চেষ্টা
ওই খালে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন মহিদ মিয়া।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় পুরোনো ও গুরুত্বপূর্ণ ভানুমতি খালকে নাল (সমতল ভূমি) জমি দেখিয়ে নামজারি করা হয়েছে। বর্তমানে সেই খালে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদনও করেছেন খাল ভরাটকারী ব্যক্তি।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগের অসাধু এক ভূমি কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে খালটিকে নাল এবং পরে নিচু জমি (বোরো) দেখিয়ে নামজারি (খারিজ) করে দিয়েছেন। স্থানীয় পশ্চিম সেওতা গ্রামের মহিদ মিয়া ওই খাল ভরাট করছেন।
খালটি ভরাট হলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পাশের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এ ছাড়া জেলা সদর হাসপাতাল এবং জেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড বাজারের পানি পয়োনিষ্কাশনের নালার মাধ্যমে এই খালে প্রবাহিত হয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভানুমতি খালটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানরা সেতুর নিচ থেকে বান্দুটিয়া হয়ে বেউথা এলাকায় কালিগঙ্গা নদীতে মিশেছে। খালের অধিকাংশ স্থানে পানি রয়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কম। খালের পূর্ব পাড়ে উত্তর সেওতা এবং পশ্চিম পাড়ে পশ্চিম সেওতা এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। উত্তর সেওতা এলাকায় (পাকা সেতুর উত্তর পাশে) খালের পূর্ব পাড়ে পাকা সড়কের পাশে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে একটি সাইনবোর্ডে লেখা, ‘পৈতৃক সূত্রে এ জমির মালিক মহিদ মিয়া গং’। পশ্চিম সেওতা এলাকার মৃত ছামাদ মিয়ার তিন ছেলে মহিদ মিয়া, মমিন মিয়া ও মিজান মিয়া।
সম্প্রতি ওই খালে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন মহিদ মিয়া। এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, খালটিকে নাল জমি দেখিয়ে পৌর ভূমি কার্যালয়ে থেকে নামজারি দেওয়া হয়েছে। খালে ব্যক্তিগত জমি থাকলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কারণ, প্রবহমান খালে ব্যক্তিগত জমি থাকলে পানিপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা ভরাট করা যাবে না। এটি আইনেও বলা আছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের সঙ্গে দেওয়া নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে এসএ রেকর্ড অনুযায়ী ৪৫ নম্বর দাগে ২৫ শতক জমির মালিক ছামাদ। তবে খালের শ্রেণি পরিবর্তন করে ওই জায়গা নাল উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আরএস রেকর্ডে ওই জায়গা বোরো (নিচু জমি) উল্লেখ করা হয়। তবে ব্যক্তিগত জায়গা হলেও প্রকৃতপক্ষে ওই জায়গাটি এখনো খালের অন্তর্ভুক্ত। খালের ওই অংশে প্রায় সারা বছর পানি থাকে।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা উল হুসনার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তাঁর কার্যালয়ের
অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে সদর উপজেলা সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন খোদেজা খাতুন। খালের ওই জায়গা ব্যক্তিগত নথিভুক্ত জমি হতে পারে। তবে খালকে জমির শ্রেণি হিসেবে নাল উল্লেখ করা আইনসিদ্ধ হয়নি।
এ বিষয়ে চেষ্টা করেও খোদেজা খাতুনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরও কার্যালয়ের কেউ দিতেন পারেননি।
পশ্চিম সেওতা খালপাড়ের বাসিন্দা ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এই খালের উৎপত্তি। দুই যুগ আগেও এই খালে নৌকাবাইচ হতো। এখনো বছরের অধিকাংশ সময় খালে পানি থাকে। বর্ষাকালে কালীগঙ্গা নদীর পানি এই খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন খাল ও কৃষিজমিতে পতিত হয়। আবার বর্ষার শেষে এই খাল দিয়েই পানি কালীগঙ্গা নদীতে ফিরে যায়। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এবং মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারের সব পানি পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে এই খালে পতিত হয়। খালটি ভরাট করা হলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে।
খালটির পাশে গজারি চকে সহস্রাধিক একর ফসলি জমি রয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম বলেন, বর্ষা শেষে এসব জমির পানি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশের খাল হয়ে ভানুমতি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালীগঙ্গা নদীতে চলে যায়। খালটি ভরাট হলে এসব জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ফসল আবাদে বিঘ্নিত হবে।
তবে খাল ভরাটকারী মহিদুর মিয়া বলেন, খালের জায়গা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। পানিপ্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা পরিকল্পনায়ও রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ে দেখছি। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’