কুষ্টিয়ায় পুলিশের ‘অভিযানের সময়’ চা-দোকানির মৃত্যুর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে তদন্তদল
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ সময় চা-দোকানির মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্তদল কাজ শুরু করেছে। আজ রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তদন্তদলের সদস্যরা ভেড়ামারায় অবস্থান করে প্রত্যক্ষদর্শীসহ আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তবে গত দুই দিনে এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা করেনি।
উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পুলিশের অভিযানের নামে চা-দোকানি রফিকুল ইসলামকে (৪৫) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। রফিকুল চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক।
পুলিশের ভাষ্য, মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ওই ব্যক্তি সেতু থেকে লাফ দেওয়ায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মারধরে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্য। ঘটনা তদন্তে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অবস ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার। তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (মিরপুর সার্কেল) আবদুল খালেক ও ডিআইও ওয়ান শেখ মো. ওবাইদুল্লাহ।
তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, রোববার সকাল থেকে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীসহ আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনাস্থলের প্রতিটি স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন। কখন কোথায় কীভাবে কী হয়, তা শোনেন এবং ভিডিও–ছবি ধারণ করেন।
জানতে চাইলে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভেড়ামারা থেকে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও অভিযানে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। ঘটনা যা–ই হোক, তা সঠিকভাবে তদন্ত করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আহত তিন পুলিশ সদস্য এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কয়েক দিন পর তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।
মারা যাওয়া ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সূত্রে জানা যায়, চণ্ডীপুর এলাকায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ৪ নম্বর সেতুর কাছে রফিকুলের চায়ের দোকান। শুক্রবার ভেড়ামারা থানার পুলিশের ছয় সদস্য সেখানে অভিযানে গেলে রফিকুল ভয়ে দোকান থেকে দৌড়ে সেতু থেকে লাফ দেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ও জাসদের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে তিন পুলিশ সদস্যকে মারধর করে একটি দোকানে আটকে রাখেন। তাঁরা পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ উপপরিদর্শক (এসআই) এস এম সালাউদ্দীন, কনস্টেবল মিজানুর রহমান ও মো. ইখলাছকে উদ্ধার করেন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ইখলাছের এক হাত ভেঙে গেছে।
জাসদ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে।