মৌলভীবাজার শহরের বুকে হলদে ফুলের ঢেউ
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের দিকে তাকিয়ে মনে হয় এখানে স্থির হয়ে আছে এক ‘সবুজ ঘাসের দেশ’। বৃষ্টিধোয়া জলে প্রচুর সবুজ হয়ে আছে মাঠ। ভেজা ঘাসে দু-এক ফোঁটা জল টলমল করছে তখনো। মাঠে এই সময়ে যাঁদের আসার কথা, সেসব স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ তখনো আসেননি।
আর এই মাঠের একপাশে যেন ‘বাতাস শাসন করে ঢেউগুলি’—এ রকম হঠাৎ হলুদ-সোনালি ঢেউ উঠছে। তবে এই ঢেউ জলের নয়। সবুজ পাতার ফাঁকে, গাছের ডালে ডালে উপচে পড়া হলুদ-সোনালি রঙের এই ঢেউ ‘টেকোমা’ ফুলের। কারও কাছে হলদে চন্দ্রপ্রভা, কারও কাছে সোনাপাতি। যে নামেই ডাকো তারে, তারা নির্বিকার। কারও প্রতি কোনো টান, কোনো দাবিদাওয়া না করেই এই ফুলগুলো ফুটে আছে।
এই ফুলগুলো যেখানে ফুটেছে, সেই স্থানটিকে দুভাবেই চেনা যায়। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ, অথবা সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক নামে। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের উত্তর পাশে এবং সৈয়দ মুজতবা আলী সড়কের দক্ষিণ পাশে এই গাছগুলো দাঁড়িয়ে। আর সেই গাছে গাছে এখন হলুদ ফুলের বন্যা। সোনাপাতি ফুল গাছের সব সবুজ ছাপিয়ে এখন ছড়িয়ে থাকা শাখায় শাখায় ফুটে আছে। মাঠের উত্তর পাশের পুরোটা অংশ তো আছেই, আরেকটু এগিয়ে সাইফুর রহমান অডিটরিয়াম প্রাঙ্গণ। সেখানেও অনেক ফুল ফুটেছে।
গাছগুলোর কোথাও থোকা থোকা ফুল ঝুলছে, কোথাও চূড়ার মতো ফুলগুলো গলাগলি করে ওপরের দিকে উঠে গেছে। কোথাও ডালের আগায় ফুল বাতাসে দুলেই চলছে। মৌমাছি, ভ্রমর, প্রজাপতিরাও এসেছে মধু খেতে, ডালে ডালে ঘুরতে, নাচতে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানটিতে দেখা গেছে, গাছগুলোতে অসংখ্য ফুল ফুটে আছে। সব গাছজুড়েই ফুলের বন্যা বইছে। হলুদ-সোনালি হয়ে আছে গাছের শাখাগুলো। ফুলের ভারে গাছগুলো নুয়ে আছে। আর সেই হলুদ-সোনালি রঙের আলো শুধু যে গাছগুলোকেই উজ্জ্বল করেছে, প্রাণবন্ত করেছে, অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
এতটা হলুদ, এতটা সোনালি উজ্জ্বলতায় সকালটি আরও রঙিন হয়ে উঠেছে। প্রায় অর্ধশত গাছে এখন ফুল এসেছে। সারা রাত ধরে হয়তো ফুল ফুটেছে, ঝরে পড়েছে অনেক পাপড়ি দল। সেই ঝরা ফুলের পাপড়ি জমে আছে মাঠের সীমানাপ্রাচীরের দেয়ালের ওপর, সড়কের ওপর, গাছতলায় ঘাসের বুকে। এসবে কারও মনে হতে পারে কেউ হয়তো হলুদ চাদর, হলুদ নকশায় সাজিয়ে রেখেছে স্থানটিকে।
হলদে চন্দ্রপ্রভা বা সোনাপাতি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। বারো মাসই গাছগুলোকে কমবেশি সবুজ থাকতে দেখা গেছে। গাছ দেখতে ঝোপমতো আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত চন্দ্রপ্রভাগাছ চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে বেশিও হতে পারে। পাতা সবুজ, পাতার কিনার খাঁজকাটা থাকে। গাছের ডালের আগায় থোকায় থোকায় হলুদ রঙের ফুল ফোটে।
বাংলাদেশে চন্দ্রপ্রভা গ্রীষ্ম-বর্ষা ও শরৎ-হেমন্তে ফুটে থাকে। তবে কিছু কিছু গাছে বছরের অন্যান্য সময়েও হঠাৎ দু-একটি ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই ফুলের মৌমাছি ও কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করার ক্ষমতা অনেক। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। তবে প্রধানত ডাল কেটে কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। এই গাছ লাগাতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। টবে, ছাদে, বাড়ির বাগানে, পার্কে, রাস্তার ধারে, সড়কদ্বীপে, স্কুল-কলেজের আঙিনায় চন্দ্রপ্রভা বা সোনাপাতিগাছ লাগিয়ে শোভা বাড়ানো যায়।