কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতাসহ ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় মোল্লা মাসুদ করিম ওরফে লাল্টু নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতাসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক তাজুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ রায় দেন। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী প্রথম আলোকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বিশ্বাস (৫৩), তাঁর দুই ভাই হাবিল উদ্দিন বিশ্বাস (৪৯) ও বাবলু বিশ্বাস (৪৬), আখতারুজ্জামানের ছেলে মাহমুদুল হাসান ওরফে সবুজ (২৫), একই গ্রামের কামরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে বিদ্যুৎ (৩৪) ও মৃত জলিল গাইনের ছেলে মাসুদ গাইন (৩৮)। রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মাসুদ গাইন ও রাশেদুল পলাতক। রায় ঘোষণার পরপরই তাঁদের পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

আখতারুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বেশ কয়েকবার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পদে রয়েছেন। তবে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছিল।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায় দহকুলা গ্রামে ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোল্লা মাসুদ করিমকে নিজ বাড়িতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আসামিরা। নিহত ব্যক্তির ভাই মাহবুবুল করিম মোল্লা আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মাসুদ করিম দহকুলা গ্রামের মৃত সোহরাব উদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি প্রবাসী ছিলেন। দেশে ফিরে একাধিক পুকুরে মাছের খামার গড়েছিলেন।

মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত এ মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। নির্ধারিত ধার্য তারিখে আদালতের বিচারক রায় ঘোষণা করলেন। রায়ে আরও তিন আসামিকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে ১৫ আসামিকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলছিল। আলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সে সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আখতারুজ্জামান। আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজ উদ্দীন শেখ। মোল্লা মাসুদ করিম ছিলেন সিরাজ উদ্দীনের সমর্থক। এ নিয়ে আখতারুজ্জামানের সঙ্গে বিরোধ বাড়ে।

রায় ঘোষণার খবরের পর আলামপুর ও দহকুলা গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রায় ঘোষণার পর এই দুই গ্রামের বেশির দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। রায় ঘোষণা নিয়ে এলাকায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে।