পদ্মা গিলছে ফসলি জমি

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে পদ্মায় ভাঙন চলছে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দেওয়ায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার মিজানপুর ইউনিয়নের বড় চরবেনীনগর গ্রামের মেছোঘাটা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর দুই কিলোমিটারে ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহের ভাঙনে দুই শ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।

নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন, একটি মসজিদ, একটি ঈদগাহসহ কয়েক শ বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা। তবে স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণের জন্য ওই এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় সাধারণত ভাঙন দেখা দেয়। তবে এই মৌসুমে ভাঙন দেখা যায়নি। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পদ্মার ভাঙন দেখা যায়। বড় চরবেনীনগর, চরনারায়ণপুর ও মহাদেবপুর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় এই ভাঙন শুরু হয়। বড় চরবেনীনগর গ্রামের মেঝোঘাটা এলাকার স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষার কাজ শেষ হওয়ার স্থান থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। কালীতলা এলাকা পর্যন্ত ভাঙন বিস্তৃত হয়েছে। 

বড় চরবেনীনগর গ্রামের মেছোঘাটা এলাকার বাসিন্দা আবদুস সামাদ শেখ বলেন, ‘নদীর পাড় থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে আমার বসতবাড়ি ছিল। সেখানে এখন মূল পদ্মা। আমি দুইবার বাড়ি ভেঙেছি। আমার ২৬ বিঘা ফসলে জমি ছিল। সুখের সংসার ছিল। এখন মেছোঘাটা এলাকায় ঘর তুলে বসবাস করছি। জমিজিরাত এখন আর নেই। আমার অনেক আত্মীয়স্বজনেরও অনেক সম্পত্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মার ভাঙনে অনেক মানুষ অসহায় হয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। কেউ রিকশা চালান।’

জসিম মোল্লা বলেন, নদী তার সব জমিই নিয়ে গেছে। অল্প কিছু জমি ছিল। ধানের আবাদ করেছিলেন। জমিতে লাঙল দিয়েছেন। আগাছা পরিষ্কার করেছেন। ধানের গাছগুলো বড় হয়ে ছিল। সোনা রঙের ধান কাটবেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকবেন। কয়েক দিনের ভাঙনে তা–ও চলে গেল। সব স্বপ্ন নদীতে মুছে গেল। আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন—সেটি ভাবতেই চোখে অন্ধকার নেমে আসছে।

রমজান আলী বলেন, পদ্মা নদীর পাড়ে তাঁর পাঁচ বিঘা জমি ছিল। এবার তিনি নিজে চাষ করেননি। জমি বর্গা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জমি পদ্মার ভাঙনে কয়েক দিনের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তাকে বর্গার টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করেছি। জমিও গেল, লাভের টাকাও গেল। আগে থেকে কাজ শুরু হলে পদ্মায় তাঁদের জমি বিলীন হতো না।

ইউপি সদস্য কোরবান আলী বলেন, প্রতিবছর পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে তাঁদের নিজেদেরও অনেক জমি বিলীন হয়ে গেছে। তাঁদের এলাকায় একযোগে ভাঙন শুরু হয়েছে। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, একটি ঈদগাহসহ কয়েক শ বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবেন। সহায়–সম্বল হারিয়ে অনেক সচ্ছল পরিবারকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মিজানপুর ইউনিয়নের মেছোঘাটা এলাকা থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে তীব্র স্রোত। নদীর ঘোলা জলে বয়ে যাচ্ছে পলিমাটি। মেছোঘাটা এলাকায় ভাঙনরোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এই কাজ করা হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলার কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর ভাই কাজী হেফাজত আলী। শ্রমিকেরা বালু বস্তায় ভরছেন। এরপর বড় বড় বস্তা নদীর পাড় ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বালুর বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে। জরুরিভিত্তিকে এই কাজ করা হচ্ছে। তবে ঠিক কতটি বস্তা ফেলা হবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।