খুলনার কয়রায় জব্দ হরিণের মাংস ‘গায়েব’

কয়রার সোমবার রাতে হরিণের মাংস জব্দ করা হয়। ১৫০ কেজি মাংস জব্দ করলেও মাত্র ২৫ কেজি মাংসের কথা উল্লেখ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনার কয়রা উপজেলার জোড়শিং লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে আসা খুলনা শহরগামী লঞ্চ থেকে গত সোমবার রাতে একটি ড্রাম ও একটি ঝুড়িবোঝাই হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়; কিন্তু পরদিন মঙ্গলবার কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দেওয়া জব্দ তালিকায় শুধু একটি প্লাস্টিকের ড্রামের কথা উল্লেখ করে মাংস দেখানো হয়েছে মাত্র ২৫ কেজি।

বাকি প্লাস্টিকের ঝুড়িতে থাকা হরিণের মাংসের বিষয়টি উল্লেখই করা হয়নি। পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের বজবজা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে হরিণের মাংস জব্দের প্রকৃত তথ্য আড়াল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তথ্য আড়াল করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কয়রার জোড়শিং লঞ্চঘাট থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘মেসার্স ফারিহা-সাদিয়া’ লঞ্চের চালক ও সোমবার রাতে লঞ্চে থাকা একাধিক যাত্রী বলেন, সোমবার রাতে বনরক্ষীদের কয়রার হরিহরপুর লঞ্চঘাটের পন্টুনে লঞ্চ ভিড়িয়ে একটি মাছ পরিবহনের প্লাস্টিকের বড় ড্রাম ও একটি প্লাস্টিকের ক্যারেট (ঝুড়ি)–বোঝাই প্রায় ১৫০ কেজি হরিণের মাংস লঞ্চ থেকে নামিয়ে নিতে দেখেছেন তাঁরা।

গতকাল বুধবার কয়রার জোড়শিং গ্রামের ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সাতজন একসঙ্গে জোড়শিং লঞ্চঘাট থেকে সোমবার রাতে খুলনা শহরে যেতে লঞ্চে উঠেছিলাম। লঞ্চটি যাত্রী তুলে ঘাট থেকে ছেড়ে কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর লঞ্চঘাটের কাছাকাছি পৌঁছাতেই লঞ্চের দিকে টর্চের আলো ফেলে থামানোর ইঙ্গিত করে বন বিভাগের লোকজন।

লঞ্চটি হরিহরপুর পন্টুনে ভিড়লে বনরক্ষীরা লঞ্চের ভেতরে থাকা একটি বড় ড্রাম ও একটি মাছ পরিবহনের প্লাস্টিকের ক্যারেট (ঝুড়ি)–বোঝাই হরিণের মাংস পন্টুনে নামিয়ে নেন। তবে দুটি পাত্রবোঝাই হরিণের মাংস কোনো অবস্থাতেই ১৫০ কেজির নিচে হবে না।

তবে হরিণের মাংস জব্দের অভিযানে অংশ নেওয়া বজবজা বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষী মো. মিজানুর রহমান তথ্য গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘দুটি পাত্রবোঝাই হরিণের মাংস উদ্ধারের তথ্য সঠিক নয়। আমরা শুধু একটি ড্রামের মাংস উদ্ধার করেছি। এ ছাড়া হরিহরপুর লঞ্চঘাট থেকে নয়; বরং জোড়শিং লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে আমরা এ মাংস উদ্ধার করি। অভিযানে যেটুকু উদ্ধার হয়েছে, আদালতে সেটুকই দেখানো হয়েছে। এখানে কোনো কিছুই গোপন বা লুকোচুরি করা হয়নি।’

কিন্তু কয়রার জোড়শিং লঞ্চঘাটের ইজারাদার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জোড়শিং লঞ্চঘাট থেকে হরিণের মাংস উদ্ধারের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। প্রতিদিন রাত সাড়ে নয়টায় ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চ ছাড়ার সময় অনেক মানুষ সেখানে উপস্থিত থাকেন। তাঁরা কেউই এমন ঘটনা দেখেননি। বিষয়টি সঠিক নয়।’

এ বিষয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার একটি নীল রঙের ড্রামে ২৫ কেজি হরিণের জব্দ মাংস নিয়ে কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জমা দিয়েছিলেন সুন্দরবনের বজবজা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র মিস্ত্রি। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়।

সুন্দরবনের বজবজা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরেশ চন্দ্র মিস্ত্রি হরিণের মাংসের পরিমাণ ও উদ্ধারের প্রকৃত তথ্য আড়াল করার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বিগত সময় হরিণের মাংস উদ্ধারের ছবি তোলা হলেও এ ঘটনার কোনো ছবিও তুলতে পারেননি বলে তিনি জানান।