‘বিশেষ ট্রেন’ থেকে পড়ে নিহত যুবকের মায়ের আহাজারি থামছে না
‘ওর বাপ মরি গিছে আট বছর আগে, সাত ভাই-বোনের মধ্যে ও বড়। ওর নিজের আট বছরের একটা ছ্যালি আছে। সবার খোঁজখবর রাখত সে। সবাইকে রাখি সে চলি গেল। একুন আমাদের কে দেখপি, কে খাওয়াবি?’ কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভার ‘বিশেষ ট্রেন’ থেকে পড়ে মারা যাওয়া যুবক মুসা সরকারের (৪০) বয়োবৃদ্ধা মা মাজেদা বেওয়া (৭৫)। আজ সোমবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ বেলা পৌনে তিনটা পর্যন্ত মুসা সরকারের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আসেনি। কিন্তু মুসার গ্রামের বাড়িতে তখন শোকের মাতম। মাজেদা বেওয়া ও মুসার স্ত্রী মিনা বেগমকে (২৮) কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছে না। একমাত্র নাতি তাছিন সরকারকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন মাজেদা। কিন্তু তাছিন নীরব। স্তব্ধ হয়ে গেছেন মিনা বেগমও।
গতকাল রোববার কি ঘটেছিল জানতে চাইলে মিনা বলেন, ‘গ্রাম থেকে অনেকেই গতকাল সকালে বাসে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা দেখতে যাচ্ছিলেন। তাছিনের বাপ বলল, নেত্রীকে কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছা হচ্ছে। তুমি অনুমতি দিলে রাজশাহীতে যাব। আমি কোনো কথা বলিনি। সে দলের বাসে উঠি চলি গিছে। মাগরিবের নামাজের সময় ফোনে রাজশাহী থেকে জানায়, সে ভালো আছে। ট্রেনে ফিরছে। এটায় শেষ কথা। রাত নয়টার দিকে ফোন আসে ও ট্রেনের ছাদ থ্যাকি পড়ি গিছে। সকালে খবর পাই সে আর দুনিয়ায় নাই।’
মুসার বাড়িতে দেখা হয় ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও ওয়ার্ড সদস্য এবং নিহতের খালাত ভাই মজিবর রহমানের সঙ্গে। মজিবর রহমান জানান, তিনিও ওই বিশেষ ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। মুসার পাশে ছিলেন ওই গ্রামের সুজন নামের এক যুবক। ছাদে তাঁর পাশ থেকে হঠাৎ মুসা নিচে পড়ে যান। তখন ট্রেনের বেশ গতি ছিল। তাঁরা চেষ্টা করেও ট্রেনটি থামাতে পারেননি। জনসভা শেষে ট্রেনটি যাত্রীতে ঠাসা ছিল। ছাদেও যাত্রীদের ঠাঁই হচ্ছিল না।
ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জানান, দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে মুসা ছিলেন বড়। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। তবু সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অন্যের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইচ্ছা থাকলেও কখনো দলের নেত্রীকে সরাসরি দেখতে যেতে পারেননি। বিনা খরচায় রাজশাহীতে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে রাজশাহীতে গিয়েছিলেন। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন দলের দায়িত্ব পরিবারের পাশে বিশেষ করে ওর একমাত্র শিশু সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর।