হিন্দুবাঘা মেলায় পাঁচ কেজির এক মিষ্টির দাম ১৮০০ টাকা

নওগাঁর মহাদেবপুরে হিন্দুবাঘা মেলায় ওঠা বালিশ মিষ্টি। আজ রোববার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

রসে ডোবানো একেকটি বালিশ মিষ্টির ওজন হয় পাঁচ কেজি পর্যন্ত। বিশাল আকারের এ রসগোল্লা মিলছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর এলাকার হিন্দুবাঘা মেলায়। পাঁচ কেজির একেকটি বালিশ মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।

তিন দিনের এই মেলা বসেছে গতকাল শনিবার। শেষ হবে আগামীকাল সোমবার। মেলা থেকে বালিশ মিষ্টি কিনে পরিবার ও স্বজনদের আপ্যায়ন করানোর রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

স্থানীয় একাধিক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলাটি বসছে ১০০ বছরের বেশি আগ থেকে। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি ‘সাধু সন্ন্যাস’ মেলা হিসেবেও পরিচিত। মেলায় প্রচুর মিষ্টি বিক্রি হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসে নানা ধরনের মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসেন। প্রতিবছর বালিশ মিষ্টি থাকে মেলার অন্যতম আকর্ষণ।

মেলা কমিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল বাবু প্রথম আলোকে বলেন, হিন্দুবাঘা মেলা উপলক্ষে এলাকায় একটা উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করে। মেলার দিনগুলোতে এলাকার সবাই মজে থাকেন এই রসগোল্লায়। আকারে যত বড় হোক না কেন, ক্রেতার অভাব হয় না।

এবার মেলায় এক কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি উঠেছে। আজ রোববার বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা গেল, মিষ্টান্ন, খেলনা, চুরি-ফিতা, আলতা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। জিলাপি ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি হচ্ছে ৫০টির বেশি দোকানে। বিক্রি হচ্ছে দেদার।

উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর পর এবার মেলায় এসেছি। তিন কেজি ওজনের একটি বালিশ মিষ্টি কিনলাম।’

বালিশ মিষ্টি বিক্রি করার সময় তা গামলা থেকে তুলতে বেগ পেতে হয় স্টলের কর্মীদের
ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ শহর থেকে মেলায় আসা বাবুল আকতার নামের আরেকজন বলেন, ‘মেলায় এসে বালিশ মিষ্টি না কিনে বাড়ি ফেরা রীতিবিরুদ্ধ। আজ মেলা দেখে ফেরার সময় বালিশ মিষ্টি কেনার ইচ্ছা আছে।’

মেলা প্রাঙ্গণে বাঁশ-ত্রিপলের ছাউনিতে তৈরি মিষ্টির দোকানে সাজানো বড় বড় গামলায় রয়েছে বিশালাকার মিষ্টি। এসব মিষ্টির পাত্রে সাঁটানো স্টিকারে লেখা রয়েছে দাম। কোনোটি হাজার টাকা, কোনোটি দেড় হাজার টাকা, আবার কোনোটি ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিকোচ্ছে।

দোকানদারেরা জানিয়েছেন, হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার বালিশ মিষ্টি বিক্রি করার সময় তা গামলা থেকে তুলতে বেগ পেতে হয়। বড় কোনো পাত্রে তা দিতে হয় ক্রেতাদের।

দাম বেশি হলেও বড় মিষ্টি ভালোই বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, প্রতিবছরই মেলায় আসা মানুষের মধ্যে বড় মিষ্টির চাহিদা থাকে। ফলে মেলা প্রাঙ্গণেই মিষ্টি তৈরি করা হয়ে থাকে।

মেলায় মিষ্টি বিক্রি করতে আসা ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রথীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দোকানে ৫০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ৫ কেজি ওজনের বালিশ মিষ্টি রয়েছে। ওজনভেদে প্রতিটি মিষ্টি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য রামপ্রসাদ ভদ্র বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলার আয়তন বড় হয়েছে। প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গাজুড়ে মেলা বসেছে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের কয়েক শ দোকান বসেছে। এর মধ্যে বরাবরের মতো ছানার তৈরি বালিশ মিষ্টি বেশি আকর্ষণ করছে ক্রেতাদের।