ময়মনসিংহে তিন দশকের পঞ্চদুর্গাপূজা

ময়মনসিংহের ফুলপুরে টানা তিন দশক ধরে সাহাপাড়া যুব সংঘের উদ্যোগে পঞ্চদুর্গাপূজা মণ্ডপে দেবীর পাঁচটি রূপের পূজা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার সাহাপাড়া যুব সংঘের উদ্যোগে ৩০ বছর আগে শুরু হয় পঞ্চদুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দেবী দুর্গার এক শ আটটি রূপ রয়েছে। এই রূপগুলোর মধ্য থেকে প্রতিবছর পাঁচটি ভিন্ন রূপের পূজা হয় এই মণ্ডপে। ফুলপুরের সাহাপাড়ার এই পঞ্চদুর্গামণ্ডপ বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগে একমাত্র মণ্ডপ, যেখানে প্রতিবছর নতুন রূপের প্রতিমা তৈরি করা হয়। এবার মণ্ডপের তোরণ সাজানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তীর্থক্ষেত্র দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে।

এ বছর দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর পাশাপাশি পূজিত হচ্ছেন দেবী প্রত্যাঙ্গিরা (সিংহের মতো ও দশভুজা), দেবী হর–গৌরী (স্বয়ং আদ্যাশক্তি মহামায়া ও মহাকালের এক মেলবন্ধন), দেবী শ্রীকালী (মা কালীর আরেক রূপ ও দশভুজা) ও দেবী বগলামুখী (দশ মহাবিদ্যার দেবী)। পাঁচজন পুরোহিত ও একজন প্রধান পুরোহিত পূজা পরিচালনা করছেন।

প্রধান পুরোহিত সুধীর গোস্বামী বলেন, প্রতিবার এই মণ্ডপে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পূজা হয়। এ পূজায় পাঁচটি প্রতিমা ও পাঁচজন পুরোহিত প্রয়োজন হয়। দুর্গার বহু রূপ থাকলেও, তাঁর মূল রূপ ও শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে নয়টি রূপকে নবদুর্গা হিসেবে পূজা করা হয় এবং নবরাত্রি উৎসবে বিশেষভাবে আরাধনা করা হয়।

এবার মণ্ডপের তোরণ সাজানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তীর্থক্ষেত্র দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে।

আয়োজক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশীথ সরকার জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আদলে এ পূজা শুরু হয়েছিল। টানা ৩০ বছর ধরে তা অব্যাহত রাখা গেছে। প্রতিবছর দেবী মায়ের রূপ পরিবর্তন করে নতুন করে পূজা হয়। অন্য কোথাও এত দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে পঞ্চদুর্গাপূজা হয়নি। নতুন প্রজন্মকে এই পূজার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে।

আয়োজক কমিটির সদস্য হৃদয় কৃষ্ণ সেন বলেন, ‘আমরা দুর্গার বিভিন্ন রূপের পূজা করি। বিভিন্ন অসুর রূপের বিনাশ করতে দেবী মা বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হন। নতুন প্রজন্মকে এই রূপগুলোর মাধ্যমে জানাতে চাই, যারা সমাজের ক্ষতি করবে, মা বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়ে তাদের বিনাশ করবেন।’

ময়মনসিংহের ফুলপুরে সাহাপাড়া পঞ্চদুর্গাপূজা মণ্ডপে ভক্ত পূজারীরা। মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

মণ্ডপে আসা ভক্তদের অনেকে জানান, দেবীর নতুন রূপ দেখার জন্য তাঁরা প্রতিবছর অপেক্ষা করেন। স্থানীয় শিল্পী দেবনাথ বলেন, ‘এবারও আমরা দুর্গার নতুন রূপ দেখছি। দেবীর নতুন নতুন রূপ দেখব বলে প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি।’

মন্দিরে দাঁড়িয়ে কথা হয় ভক্ত তিশা নন্দীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন পঞ্চদুর্গাপূজা আর কোথাও হয় না। এখানে পূজার মাধ্যমে মা দুর্গার রূপগুলো সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, পূজার মহিমা জানতে পারি।’