অর্কের সঙ্গে কবরে ঠাঁই পেল বিয়ের অনুষ্ঠানের ফুল

শোবার ঘরের পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় অর্ক। তাঁর কবরের পাশে রাখা হয়েছে বিয়ের কিছু ফুল। রোববার দুপুরে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর কাঁচা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বউভাতের অনুষ্ঠানের পরনের স্যুট আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বর অর্ক হোসেন ওরফে অংশুর (২৩) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অর্কের কবরটি তাঁর শয়নকক্ষ থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে। পাশেই রয়েছে দাদা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ইমদাদ হোসেনের কবর। বিয়ের অনুষ্ঠান ও বাসরের সাজসজ্জার জন্য যে ফুল আনা হয়েছিল, সেই ফুল পড়ে রয়েছে অর্কের কবরের পাশে।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অর্কের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ থেকে তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর কাঁচা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে রামেরকান্দা ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে অর্ককে দাফন করা হয়। এদিন বেলা দুইটার দিকে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর-রামেরকান্দা সড়কের বাঘাসুর এলাকায় এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন অর্ক। শুক্রবার স্থানীয় প্রবাসী আরিফ হোসেনের মেয়ে আফরিন আক্তারের (১৯) সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। অর্ক রাজধানীর এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একটি কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।

আরও পড়ুন

আজ রোববার দুপুরে অর্কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশ এলাকা থেকে আসা মানুষ ও স্বজনদের ভিড় বাড়িজুড়ে। অর্কের কক্ষে প্রবেশ করতেই ঘরের মালামাল এদিক–সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের বাসরঘরের জন্য সাজানো ফুল ও নববধূর বিয়ের লেহেঙ্গা বিছানায় পড়ে রয়েছে। বিছানার পাশে বসার চেয়ারটিও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। বিছানার পাশের টেবিলে বিয়ের সাজসজ্জার সামগ্রী রাখা হয়েছে। এই ঘর থেকে ১০ গজ দূরে সীমানাদেয়াল দিয়ে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। ওই কবরে শায়িত আছেন ভাষাসৈনিক ইমদাদ হোসেন। সেই কবরে আজ অর্ককে শায়িত করা হয়েছে। অর্কের কবরের পাশে পড়ে আছে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আনা ফুলের মালা।

নিহত অর্ক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী আফরিন আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

দুপুরে অর্কের স্ত্রী আফরিন আক্তার অর্কের কবরে সামনে গিয়ে বাবা আরিফ হোসাইনকে বারবার অনুনয় করে বলছিলেন, ‘ওকে একটু স্পর্শ করে দেখতে দাও। সে আমাকে রেখে কী করে চলে গেল? আমি তাঁর পাশে থাকতে চাই।’

অর্কের বাড়ির পেছনের দিকে একটি নার্সারি রয়েছে। সেখানে অর্কের বাবা নাসিম হোসাইন একটি চেয়ারে বসে আছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার শয়নকক্ষের পাশে অর্কের ঘর। সেই ঘরে বিয়ের বাসরঘর সাজানো হয়েছিল। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে খুব শখ করে আমি ঘরটি সাজিয়েছিলাম। ছেলে ও তাঁর স্ত্রী যাতে সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা করেছিলাম। বিয়ের দিন ছেলের বন্ধুরা ওই ঘরে ফুল দিয়ে বাসর সাজায়। আর আজ ওই ফুল ছেলের কবরের পাশে পড়ে আছে। ছেলে তো আমাকে একা ফেলে চলে গেল। ঘরটি আমার কাছে আমৃত্যু ছেলের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

অর্কের সঙ্গে স্মৃতি তুলে ধরে বাবা নাসিম আরও বলেন, ‘ছেলের জন্মের পর থেকে গত ২৩ বছর কখনো এক দিনের জন্য ছেলে থেকে আলাদা হইনি। ব্যবসায়িক কাজে ভারতে গেলেও তার সঙ্গে প্রতিদিন সকাল–বিকেল যোগাযোগ রাখতাম। তার সঙ্গে কথা না বলে ঘুমাতাম না। আর এখন আমার ছেলে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো। এখন আমি কাকে নিয়ে থাকব?’