ড্রোন উড়িয়ে শনাক্ত করা হবে সেন্ট মার্টিনের বর্জ্য
কোথায় পড়ে আছে প্লাস্টিক বর্জ্য, তা খুঁজে বের করতে উড়বে ড্রোন। বর্জ্য শনাক্ত করে সেসব সংগ্রহ করা হবে। কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় আজ বুধবার শুরু হচ্ছে এমন কার্যক্রম। দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও চলবে এর পাশাপাশি। পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার সেন্ট মার্টিনে গেছে।
বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপটিতে এখন কোনো পর্যটক নেই। সরকার ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পর্যটকশূন্য থাকায় দ্বীপের পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজ এখন পুরোদমে চলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাওয়ার পানির সংকট নিরসন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কোন কোন জায়গায় প্লাস্টিকসহ বর্জ্য পড়ে আছে, ড্রোনের মাধ্যমে তা শনাক্ত করা হবে। এ জন্য গতকাল পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে রওনা দিয়েছে। আজ সকাল থেকে দলটি ড্রোনের মাধ্যমে বর্জ্য শনাক্তকরণের কাজ শুরু করবে। এরপর সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষায় করণীয় ঠিক করতে দ্বীপের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ফেব্রুয়ারির ১০ অথবা ১২ তারিখ বর্জ্য অপসারণ শুরু হবে।
পর্যটক না থাকায় যে পরিবর্তন
এদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পাঁচ দিন ধরে পর্যটক না থাকায় শ্রমজীবী মানুষের ওপর এর মধ্যেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগে যাঁরা ইজিবাইক-টমটম চালাতেন, তাঁদের কেউ কেউ বিকল্প আয়ের সন্ধানে নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরছেন। কেউ কেউ আহরিত মাছ বালুচরে বাঁশের মাচা বেঁধে শুঁটকি উৎপাদনে নেমেছেন। কেউ পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ শুরু করছেন। নারীদের কেউ কেউ পাথর ভাঙা, পিঠাপুলি তৈরি ও কৃষিকাজে মনোনিবেশ করছেন।
দ্বীপের পূর্ব পাশের একটি জায়গায় বসে পাথর ভাঙার কাজ করছিলেন মাঝেরপাড়ার ফাতেমা খাতুন। সারা দিন পাথর ভেঙে তিনি আয় করেন ৩০০ টাকা। সে টাকায় চলে সংসার ও অসুস্থ স্বামীর ওষুধ কেনা। স্বামী সব্বির আহমদ (৮০) দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিসে ভুগছেন। আগে তিনি দ্বীপে তিন চাকার ভ্যান চালাতেন। কম আয় হলেও তাঁর চলে যাচ্ছে। কারণ, এখন পর্যটক নেই। কম টাকায় অন্তত মাছ খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
দ্বীপের পূর্ব পাশের সৈকতে বাঁশের মাচা তুলে সেখানে মাছ শুঁটকি করছিলেন স্থানীয় উত্তরপাড়ার বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ। মাছসংকটের কারণে অধিকাংশ মাচা খালি পড়ে আছে। আশপাশে আরও কয়েকজন শুঁটকি উৎপাদনের জন্য মাচা তৈরি করে রেখেছেন।
কেফায়েত উল্লাহ (৪৫) বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দ্বীপের শতাধিক জেলে সাগরে জাল ফেলে যে মাছ আহরণ করেছেন, তার সবটাই হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যটকের চাহিদা পূরণে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকেরা সেই মাছ চড়া মূল্যে কিনে নিতেন। ওই সময় ১০০ টাকার প্রতি কেজি টুইট্যা ও ফ্লাইং ফিশ বিক্রি হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। তখন সাধারণ মানুষের এত টাকায় মাছ খাওয়ার সাধ্য ছিল না। এখন পর্যটক নেই। কম দামে মাছ খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন দ্বীপের মানুষ। চাহিদার অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়লে তখন শুঁটকি করা হয়। কারণ, কাঁচা মাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা সেখানে নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মানবাধিকারকর্মী নুর মোহাম্মদ (৫০) বলেন, পর্যটকের সমাগম বন্ধের মধ্যে আগামী সাত-আট মাসে দ্বীপের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাওয়ার পানির সংকট দূরীকরণ ও অতিদরিদ্র লোকজনের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রদান এবং নতুন করে যেন কেউ হোটেল-রিসোর্ট তৈরি করতে না পারেন, সেদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সরকারের কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সেন্ট মার্টিনের লোকজনকে পুরোনো পেশায় ফিরিয়ে নেওয়া গেলে অভাব দূর হবে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বন্ধের সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ খাওয়ার পানির সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে দ্বীপের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। দ্বীপে হোটেল-রিসোর্ট আছে ২৩০টি। কোনোটির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই।