ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি ও জালিয়াতির অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৮

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন শেখ আবু হানিফ
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে সাতজনকে ও নগরের কাটাখালী এলাকা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করা হয়। পরে নগরের মতিহার ও চন্দ্রিমা থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় কুমার বসাক।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শেখ আবু হানিফ, হাসিবুল হাসান শান্ত, মো. ইসরাফিল হোসাইন, মো. স্বপন হোসাইন, বিদ্যুৎ হাসান, এনামুল হক, মো. আবদুর রাকিব ও সোহানুর রহমান। তাঁদের মধ্যে শেখ আবু হানিফ ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। গ্রেপ্তার হাসিবুল হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও নাটোর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

গ্রেপ্তার মো. স্বপন হোসাইন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এনামুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। মো. ইসরাফিল হোসাইনের বাড়ি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। বিদ্যুৎ হাসান জয়পুরহাট সদর উপজেলার পূর্ব জানিয়ার বাগান গ্রামের বাসিন্দা। সোহানুর রহমান পাবনার লাইব্রেরি বাজার এলাকার বাসিন্দা। বাকি একজনের বিষয়ে জানা যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে সাতজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে একজন প্রাথমিকভাবে নাম-পরিচয় স্বীকার করেননি। তিনি গতকাল ‘এ’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ১৩৯ নম্বর কক্ষে রূপম সরকারের (রোল-৭৪২৬২) হয়ে প্রক্সি দেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তাঁর নাম শেখ আবু হানিফ। তিনি ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রক্সিদাতাদের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাতে নগরের কাটাখালী এলাকা ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নগরের মতিহার ও চন্দ্রিমা থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম জালিয়াতির মামলা করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম প্রক্সিদাতাদের সঙ্গে ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চুক্তি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা এ তথ্য জানান।

ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ভর্তি জালিয়াতি ও প্রক্সি-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তার জড়িত আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।