‘ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে কলা চাষ

তিন দশক আগে মধুপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ শুরু হয়। লাভজনক ফসল হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কলা চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ‘ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে কলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। গতকাল উপজেলার বেড়িবাইদ ইউনিয়নের গোবুদিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ‘ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। তাই বিষমুক্ত নিরাপদ কলা উৎপাদন করা যায়।

কিন্তু টিস্যু কাপড়ের তৈরি এই ব্যাগ বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক চাষি ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে পারছেন না।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, তিন দশক আগে মধুপুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ শুরু হয়। লাভজনক ফসল হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কলা চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। দেশে কলা উৎপাদনের অন্যতম অঞ্চলে পরিণত হয়েছে মধুপুর। কলার ছড়িতে পোকা আক্রমণ করে। এ সমস্যা দূর করতে দু-তিন বছর ধরে এ এলাকায় ‘ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। এ পদ্ধতিতে গাছে ‘থোর’ এলেই তা একটি ব্যাগের ভেতর ভরে দেওয়া হয়। ওই ব্যাগের ভেতরেই থোর থেকে কলার ছড়ি বড় হয়। এতে কোনো পোকামাকড় কলার গায়ে বসতে পারে না। কলা রোগমুক্ত থাকে। কলার রং ভালো হয়। বাজারে বেশি দামে কলার ছড়ি বিক্রি করতে পারেন চাষিরা। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার এই উপজেলায় ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ ভাগ জমিতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলা চাষ হচ্ছে। 

সরেজমিন মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলা চাষ করতে দেখা যায়। বেরিবাইদ ইউনিয়নের গোবুদিয়া গ্রামের মতিউর রহমান জানান, তিনি তিন একর জমিতে কলা চাষ করেছেন। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ২০০ কলাগাছে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। এতে ভালো ফল পেয়েছেন। কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। কলার রং খুব ভালো হয়েছে। তাই বাজারে ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করা কলার চাহিদা বেশি।

মহিষমারা ইউনিয়নের শালিকা গ্রামের কৃষক হাতেম আলী জানান, ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করলে কলা ভালো হয়। কিন্তু এই ব্যাগ সহজে পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাগ ছাড়া কলা চাষ করতে হয়। 

উরাগাছা গ্রামের আবদুল হালিম জানান, ২০ একরে কলা চাষ করেছেন। এর মধ্যে সাত একরে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। টিস্যু কাপড়ে তৈরি করা ব্যাগ পাননি। তাই বিকল্প হিসেবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করেছেন। পলিথিন অবৈধ হওয়ায় তা পেতেও অনেক বেগ পেতে হয়। 

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) রুরাল মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্র্যান্সফরমেশন (আরএমটিপি) প্রকল্পের আওতায় কিছু কৃষকের মধ্যে টিস্যু ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার সরকার জানান, ব্যাগি পদ্ধতিতে চাষ করলে কলায় পোকা দমনের জন্য কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। তাই বিষমুক্ত নিরাপদ কলা পাওয়া যায়। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল-মামুন রাসেল জানান, ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলা উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। টিস্যু ব্যাগ যেসব প্রতিষ্ঠান আমদানি করে, তাদের সঙ্গে কৃষকদের সংযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।