ইউএনওর নৌকার ধাক্কায় ডুবেছে শ্রমিকদের নৌকা, ভিডিও ভাইরাল

শ্রমিকদের বারকি নৌকাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে ইউএনওর ইঞ্জিনচালিত নৌকা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দকে বহনকারী একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাথর বহনকারী একটি বারকি নৌকাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছে—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার ধলাই নদের সেতুর প্রায় ৫০০ গজ উত্তর অংশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই ভিডিওটি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আবুল হোসেন ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। অনেকে ভিডিওটি দেখে ইউএনওর সমালোচনা করে বিরূপ মন্তব্যও করেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের। এতে দেখা যায়, একটি পাথরবাহী বারকি নৌকায় তিনজন শ্রমিক ছিলেন। ইউএনওকে বহনকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি ওই বারকি নৌকা বরাবর আসছিল। এ সময় প্রথমে দুজন এবং পরে আরেকজন শ্রমিক নদে লাফিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরই বারকি নৌকাটিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ধাক্কা দেয়। এতে বারকি নৌকাটি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে তিনজন শ্রমিক সাঁতরে তীরে ওঠার চেষ্টা করছিলেন।

আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করা হলেও সেটি গিয়ে বারকি নৌকায় ধাক্কা লাগে। এ ছাড়া বারকি নৌকায় থাকা ব্যক্তিরা লাফ দিয়ে পড়ার আগে নিজেদের নৌকাটিকে ডুবিয়ে দেয়। দুইয়ে মিলে পাথরবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। এখন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী একটা মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে আমাকে বিতর্কিত করতে ভুল একটা বার্তা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।
সুনজিত কুমার চন্দ, ইউএনও, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ

জানতে চাইলে ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে কোম্পানীগঞ্জের পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরপরও ফাঁকফোকরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করার অভিযোগ আছে। ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) ধলাই নদ দিয়ে নৌকাযোগে বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন সাদা পাথর এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে কিছু ব্যক্তি বারকি নৌকা দিয়ে ফিরছিলেন। আমরা তাঁদের নৌকাটি থামাতে বলি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে তীরে উঠে যান।’

বারকি নৌকায় ধাক্কা দেওয়া প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, ‘আমাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করা হলেও সেটি গিয়ে বারকি নৌকায় ধাক্কা লাগে। এ ছাড়া বারকি নৌকায় থাকা ব্যক্তিরা লাফ দিয়ে পড়ার আগে নিজেদের নৌকাটিকে ডুবিয়ে দেয়। দুইয়ে মিলে পাথরবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। এখন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী একটা মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি ছড়িয়ে আমাকে বিতর্কিত করতে ভুল একটা বার্তা দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’

ফেসবুকে ভিডিও আপলোডকারী গণমাধ্যমকর্মী আবুল হোসেন আজ শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন ইউপি চেয়ারম্যান ভিডিওটি প্রথমে আপলোড দেন। পরে তাৎক্ষণিক তিনি ডিলিটও করে দেন। তবে আমি ভিডিওটি ডাউনলোড করে ফেসবুকে দিই। যাঁরা বারকি নৌকা নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা আসলে পানিতে ভাসমান লাকড়ি তুলছিলেন। তাঁরা পাথর তোলেননি। অথচ ইউএনওর নির্দেশে ওই বারকি নৌকাটিকে অমানবিকভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন তাঁর (ইউএনও) নির্দেশে আরও দুটি বারকি নৌকা ডোবানো হয়েছিল। এ ছাড়া সেদিন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছেন, এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে ইউএনও ১৭ জন নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলাও দেন।’

আবুল হোসেন আরও বলেন, ইউএনওর ‘অমানুষিকতা’র প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বেলা তিনটায় ধলাই সেতুর পূর্ব পাড়ে বারকি বাঁচাও আন্দোলন সিলেটের উদ্যোগে ‘বারকিবন্ধন ও সমাবেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বারকি শ্রমিকদের ওপর ইউএনওর অমানুষিক নির্যাতনের বিচার, নিরীহ পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের সব পাথর কোয়ারি চালু করার দাবি জানানো হবে।