কক্সবাজারের-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কাছ থেকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি চান টেকনাফের যুবক মোহাম্মদ ইসহাক (২৯)। তাঁর দাবি, বদির সন্তান তিনি। আর এই দাবি আদায়ে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসনে প্রার্থী হবেন। এ জন্য মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন তিনি। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার। বদি ও তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারও এবার এই আসনের দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
বদির সন্তান দাবি করা ইসহাকের বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীপাড়ায়। ১৯ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির কাছ থেকে সন্তানের স্বীকৃতি আদায় করতে তিনি এ আসনের লড়ছেন। বদি তাঁর বাবা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে মোট ভোটারের ১ শতাংশের সম্মতি লাগে, সে হিসাবে তাঁর ৩ হাজার ২৬৭ জন ভোটারের সম্মতি লাগবে। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় দুই হাজার জনের সম্মতি পেয়েছেন। অবশিষ্ট ভোটারের সম্মতি নিয়ে ৩০ নভেম্বরের আগে মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন।
‘আবদুর রহমান বদি আমার জন্মদাতা বাবা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তিনি আমাকে গাড়ি–বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকবার। পারিবারিকভাবে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সম্মানহানির অজুহাতে তিনি আমাকে সন্তানের স্বীকৃতি দিতে নারাজ।’
বদির বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন দলের আরও আট নেতা। এই নেতারা বদির বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা হলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী ও সমাজকর্মী মনোয়ারা বেগম মুন্নী চৌধুরী।
নুরুল বশর ও মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ইসহাক যে বদির সন্তান, তা বদির পরিবারের লোকজনসহ এলাকার কমবেশি সবাই জানেন। ইসহাকের চেহারা, শারীরিক গঠন হুবহু বদির মতো। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে বদি সন্তানের স্বীকৃতি দিতে পারছেন না।
দলের নেতারা বলেন, এমনিতে দলের মনোনয়ন নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন বদি; ঝুলে আছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা। এই মামলায় বদির তিন বছরের সাজা হয়েছিল। কারাভোগও করেন তিনি। এর মধ্যে ইসহাকের পিতৃপরিচয় নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে বদির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সহকারী জজ আদালতে (টেকনাফ) ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলা করেন মোহাম্মদ ইসহাক। মামলায় মূল বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা টেকনাফের পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম ও নিজের মা সুফিয়া বেগমকে। দুজন আদালতে হাজির হলেও বদি এখন পর্যন্ত আদালতে আসেননি।
সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে বদির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সহকারী জজ আদালতে (টেকনাফ) ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলা করেন মোহাম্মদ ইসহাক। মামলায় মূল বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা টেকনাফের পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম ও নিজের মা সুফিয়া বেগমকে। দুজন আদালতে হাজির হলেও বদি এখন পর্যন্ত আদালতে আসেননি।
মোহাম্মদ ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুর রহমান বদি আমার জন্মদাতা বাবা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তিনি আমাকে গাড়ি–বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকবার। পারিবারিকভাবে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সম্মানহানির অজুহাতে তিনি আমাকে সন্তানের স্বীকৃতি দিতে নারাজ।’
ইসহাক আরও বলেন, সহায়সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে—এ ভয়ে বদি তাঁকে সন্তানের স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। তাঁর সহায়সম্পদের দরকার নেই। ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দিলেই খুশি তিনি। ইসহাক বলেন, আইনগতভাবে ছেলের স্বীকৃতি পেতে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত থেকে বদির কাছে নোটিশ (সমন) ইস্যু হলেও তিনি (বদি) এই পর্যন্ত আদালতে হাজির হননি। তাই বাধ্য হয়ে ‘বাবার’ বিরুদ্ধে লড়তে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।
ইসহাক বলেন, বদি যদি তাঁকে কাগজে–কলমে সন্তান হিসেবে তাঁকে স্বীকার করেন, তাহলে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাবেন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করারও দাবি জানান ইসহাক।
এ প্রসঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ইসহাকের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মামলার পর বদি এ পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দেননি। আদালত কর্তৃক ইস্যু করা সমনও ফেরত আসেনি। সমন ফেরত এলে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আদালতের সমন গ্রহণ না করার বিষয়ে আবদুর রহমান বদির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রসঙ্গে বদি কক্সবাজারের একটি অনলাইন চ্যানেলকে বলেন, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ইসহাক তাঁর সন্তান নয়। বদি বলেন, আদালতে মামলা চলছে, সেখানে সবকিছু প্রমাণ হবে।