চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষককে মারপিট করা সেই ছাত্রের আদালতে আত্মসমর্পণ
চুয়াডাঙ্গায় পরীক্ষার হলে খাতা কেড়ে নেওয়ায় শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার মামলায় অভিযুক্ত দশম শ্রেণির সেই ছাত্র আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সে চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করে। আদালতের বিচারক জেলা জজ বেগম মুসরাত জেরীন জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) পাঠানোর আদেশ দেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে বিকেলে তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে যশোর শহরের পুলেরহাটে অধিদপ্তর পরিচালিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) নেওয়া হয়।
গত রোববার শহরের ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভিজে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ওই ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়টিতে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালে কক্ষপরিদর্শক হাফিজুর রহমান পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বাণিজ্য বিভাগের এক ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন। এরপর খাতা ফেরত চেয়ে না পাওয়ায় ওই ছাত্র শিক্ষক হাফিজুর রহমানের গালে সজোরে দুটি চড় মেরে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। আকস্মিক এ ঘটনায় ওই শিক্ষক হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার এ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্র ওই দিন রাতে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান থানায় মামলা করেন।
তদন্ত কমিটিকে পক্ষপাতহীনভাবে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রতিটি তথ্য ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হচ্ছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিদ্যালয় ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়সংলগ্ন শহীদ আলাউল হোসেন সড়কের ওপর বসে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এ কর্মসূচি চলে। কর্মসূচি থেকে অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। কর্মসূচি চলাকালে সেখানে পুলিশ আসে। পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানানো হয়, যার গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন, সেই ছাত্র স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এই খবর শোনার পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে বিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এদিকে জেলা প্রশাসনের গঠন করা চার সদস্যের তদন্ত কমিটি আজ দ্বিতীয় দিনের মতো সরেজমিন তদন্ত করেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তার কমিটির আহ্বায়ক। সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান।
কমিটির সদস্যরা রোববারের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও চিত্র পর্যালোচনা করেন। সেই সঙ্গে তাঁরা মারপিটের শিকার শিক্ষক ও ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
বিদ্যালয়টির সভাপতি জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা প্রথম আলোকে জানান, তদন্ত কমিটিকে পক্ষপাতহীনভাবে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রতিটি তথ্য ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হচ্ছে।