গরু ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় ৫ বছর পর সাতক্ষীরার সাবেক এসপি-এএসপির নামে মামলা
সাতক্ষীরায় পাঁচ বছর আগে এক গরু ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা করেছেন ওই ব্যক্তির স্ত্রী। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়ের করা এ মামলায় আসামি হিসেবে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মঞ্জুরুল কবীর ও সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মনিরুজ্জামানসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক খুলনার উপমহাপরিদর্শককে (ডিআিইজি) অভিযোগের বিষয়ে তিনি নিজে অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মো. নজরুল ইসলাম। আগামী ২১ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী জি এম জাকির হায়দার গত বৃহস্পতিবার মামলার আবেদনটি করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, সদর থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) কালাম, একই থানার সাবেক এএসআই মালেক, সদর উপজেলার বাঁশদহা কাজীপাড়ার আবদুল খালেক ও একই গ্রামের বিপুল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী আকলিমা খাতুনের স্বামী লিয়াকত সরদার একজন গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ভারতীয় গরু সংগ্রহ করে দেশব্যাপী সরবরাহ করতেন। তাঁর ব্যাবসায়িক অংশীদার ছিলেন এই মামলার আসামি আবদুল খালেক। গোপনে আবদুল খালেক গরু বিষয়ে সমস্ত তথ্য মামলার অপর আসামি বিপুলকে দিতেন।বিপুল সোর্স হিসেবে সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হককে অবহিত করতেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, এমদাদুল হকের নির্দেশে এসআই কালাম ও এএসআই মালেক ২০২০ সালের ১৬ জুলাই দুপুরে লিয়াকতের বাড়িতে গিয়ে ‘গরুর বিক্রি করে অনেক লাভ করেছিস বলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে’ থানার ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। নতুবা জীবন হারনোর হুমকি দিয়ে যান ওই দুজন। কিছুক্ষণ পর আবদুল খালেক এসে বাদীর স্বামী লিয়াকত সরদারকে বিপুলের সঙ্গে কথা বলে ওসির সঙ্গে দফারফার পরামর্শ দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় আবদুল খালেক ও লিয়ায়ত সরদার বিপুলের সঙ্গে দেখা করেন। লিয়াকত ৫০ হাজার টাকা বিপুলকে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করার কথা বললে তিনি (বিপুল) আশ্বস্ত করেন। কয়েক দিন পর ওই বছরের ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় এসআই কালাম ও এএসআই মালেক লিয়াকতকে ওসির সঙ্গে দেখা করানোর জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। রাতে লিয়াকত বাড়িতে না ফেরায় পরের দিন পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী।
বাদীর ভাষ্য, বিষয়টি পুলিশ সুপার দেখবেন বলে আশ্বস্ত করে তাঁকে সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কাছে পাঠান। পরে বাদী ও সাক্ষীরা বাড়িতে চলে যান। ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসআই কালাম ও এএসআই মালেক লিয়াকত সরদারের বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে ওই দুজন বলেন, লিয়াকত সরদারকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে বাঁচাতে চাইলে দ্রুত ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা জোগাড় করার জন্য বাদী সময় চাওয়ায় কালাম ও মালেক চলে যান। ৩০ জুলাই সকালে বাদীর কাছে খবর আসে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ কয়ারবিলে তাঁর স্বামী লিয়াকত সরদারকে কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বাদী তাঁর স্বামীর মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।