চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামে গ্রামে নীল উৎসব

চৈত্রসংক্রান্ত উপলক্ষে শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে নীল উৎসব পালন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গতকাল বুধবার রাতে শহরের পালং এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলা বছরের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে নীলপূজা বা নীল উৎসব করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। আজ বৃহস্পতিবার রাতে মহাদেবপূজা ও চড়কপূজার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের শেষ হবে। চৈত্রসংক্রান্তিতে স্বামী-সন্তানের মঙ্গল কামনা করে সনাতন নারীরা উপবাস থেকে মহাদেবপূজা করেন এবং নীল উৎসবে যোগ দেন।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা জানান, নীলপূজা বা নীল উৎসব বাঙালির একটি লোকজ উৎসব। সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে নীল উৎসব করেন। নীল-নীলাবতী, যা শিব-দুর্গার বিবাহ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নারীরা স্বামী-সন্তান ও দেশের মঙ্গল কামনা করে নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করেন।

আরও পড়ুন

সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তিতে মহাদেব ও চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে গ্রামের কিশোর, তরুণ ও যুবকেরা নীলসন্ন্যাসী, শিব-দুর্গা, রাধা-কৃষ্ণসহ বিভিন্ন দেব-দেবী সেজে গীতিবাদ্যসহ গ্রামে গ্রামে ঘোরেন। গ্রামের সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেচেগেয়ে ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। তখন উপবাস থাকা সনাতন নারীরা চাল, ডাল, ফলমূল ও টাকাপয়সা অর্পণ করেন।

চলতি বছর শরীয়তপুরে ১৫টি দল বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে নীল উৎসব উদ্‌যাপন করছে। তারা সারা রাত গ্রাম ঘুরে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। একেকটি দলে ১৫ থেকে ২০ জন নাট্যকর্মী, বাজনাদার অংশ নিয়েছেন।

সদর উপজেলার পাটানিগাঁও এলাকা থেকে ২০ জনের একটি দল নিয়ে নীল উৎসব করছেন স্বপন মণ্ডল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, বাবা-কাকারা চৈত্রসংক্রান্তিতে নীল উৎসব করেন। সেই ধারা আমরা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের সবার মঙ্গল কামনায়, রাষ্ট্রের মঙ্গল কামনায় আমরা প্রার্থনা করছি। আমাদের এ লোকজ উৎসবের ঐতিহ্যটা ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’

সদর উপজেলার পালং এলাকার গৃহবধূ দিপা দেবনাথ বলেন, প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন (পঞ্জিকা অনুযায়ী) উপবাস থেকে মহাদেবের পূজা করেন। পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে স্বামী-সন্তান ও জগৎ-সংসারের মঙ্গল কামনা করেন। এতে অশান্ত মন শান্ত হয় বলে তিনি মনে করেন। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে পাড়ার ছেলেরা নীল উৎসব করে। বাড়িতে নেচেগেয়ে উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়। সবকিছুর মঙ্গল হবে বলে তাঁরাও উৎসবে যোগ দেন।

আরও পড়ুন

শরীয়তপুর জেলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের পুরোহিত শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, চৈত্রসংক্রান্তির আগের দিন প্রতিটি বাড়ির সনাতন বধূরা উপবাস থাকেন। সন্ধ্যায় মহাদেবের পূজা করেন। মহাদেবের আরেকটি নাম নীল। এ পূজাকে ঘিরেই নীল উৎসবের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি অমিত ঘটক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সারা বছর নানা সংকটের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়। পেছনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। এ জন্য চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে সনাতন ধর্মের নানা পৌরাণিক কাহিনি ও পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। নীলপূজার পর সন্ধ্যায় শিবমন্দিরে বাতি দিয়ে জলগ্রহণ করেন। আয়োজন সর্বজনীন করতে গ্রামের কিশোর ও যুবকেরা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে উৎসব করেন।