মোল্লাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান বললেন, ‘আমার তো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই’

মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী (বাঁ থেকে) শাহীনুল আলাম ছানা, আইভি আলম রুমকি, তাজউদ্দিন আহম্মদ ও শেখ নাসির উদ্দিন
ছবি; সংগৃহীত

দ্বিতীয় ধাপে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে টানা দুবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল আলম ছানার সঙ্গে তাঁর মেয়ে এবং শ্যালকও প্রার্থী হয়েছেন। তবে মেয়ে ‘ডামি’ প্রার্থী এবং শ্যালক ভোটের আগে সরে দাঁড়াবেন বলে গুঞ্জন আছে।

তাঁদের বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মী যে একজন প্রার্থী হয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান শাহীনুলের সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন। তিনিও ভোটের দিন পর্যন্ত মাঠে টিকে থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ভোটারদের মধ্যে কথা বলার ব্যাপারে অস্বস্তি দেখা গেছে। এমনকি হামলার শিকার প্রার্থীও এ নিয়ে কথা বলছেন না আর। শাহীনুলও কথাবার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী থাকুন, তা চান না বলেই আভাস দিচ্ছেন।

অথচ এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় প্রার্থী রাখেনি আওয়ামী লীগ। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কোনো প্রার্থীর পক্ষ নিতে বারণ করা হয়েছে দল থেকে।

আরও পড়ুন

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন শাহীনুল আলম, আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আইভি আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি তাজউদ্দিন আহম্মদ এবং আওয়ামী লীগের কর্মী শেখ নাসির উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে আইভি আলম চেয়ারম্যান শাহীনুলের মেয়ে এবং তাজউদ্দিন শাহীনুলের শ্যালক। শেখ নাসির উদ্দিন মোল্লাহাটের কুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাহবুদ্দিনের ছেলে। তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর দলীয় পদ নেই।

স্থানীয় লোকজন জানান, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিতে গিয়ে ৮ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের সামনে নাসিরের ওপর হামলা হয়। বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা এ হামলা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আগে যেটা হয়েছে, সেটা নিয়ে কোনো কথা বলব না। এই মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে চাই।’

আরও পড়ুন

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এবার দলীয় প্রার্থী না থাকলেও এখানে ইঙ্গিত আছে। সেই ইঙ্গিতের বিরুদ্ধে কারও প্রার্থী হওয়া ঠিক হয়নি। আর প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা টিকে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যে সিদ্ধান্ত ছিল, কেউ দলীয় প্রার্থী নন, তা মোল্লাহাটে মানা হচ্ছে না। এখানে মেয়েকে ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি এলাকায় এমনিতেই প্রভাবশালী। ভোটকেন্দ্রে এজেন্টসহ নানা হিসাব আছে। মেয়েকে প্রার্থী দাঁড় করানো একটা কৌশলমাত্র।

মোল্লাহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কালিদাস বিশ্বাসও প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে তো ডামি প্রার্থী। বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাজউদ্দিন আহম্মদ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে পারবেন কি না, দেখার বিষয়। যাঁকে (সরে যেতে পারেন, এমন প্রার্থী) আমি একটা ভোট দেব, তাঁর জন্য তো আমার আস্থা থাকতে হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর বোঝা যাবে সব।’

নাসির উদ্দিনের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কালিদাস বিশ্বাস বলেন, ‘কাজটা ভালো হয়নি। আমি ছোট রাজনীতিবিদ, আমার কাজ হচ্ছে মানুষের মঙ্গল করা। কিন্তু তা হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন

নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকা কঠিন হবে বলছেন প্রার্থী তাজউদ্দিন আহম্মদও। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে কথা-কাজের মিল নেই। আমি আর কিছু বলব না। প্রশাসন যদি ঠিক না থাকে, তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হবে।’

তবে শাহীনুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু এবং ভালো নির্বাচন হবে, এটাই আশা করি। আমার মেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে। আরেকজন আছে শেখ নাসির, এরা আমাদের দলছুট লোক। এদের দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরা দাঁড়াইছে, বিএনপি-জামায়াত যারা আছে, তারা মনে হয় দাঁড় করায় দিছে।’ শ্যালকের প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা বলব না। তারা চাইছে আমরা বলি, কিন্তু বলব না।’

চেয়ারম্যান শাহীনুল আলম আরও বলেন, ‘আমার তো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, এই দুজন (নাসির ও তাজউদ্দিন) তো মোল্লাহাটে কোনো এজেন্টই পাবে না। মানুষের ভোট কি এত সহজ? এরা দাঁড়াইছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। আমি তো দলের মনোনীত নই, কিন্তু আমি তো সমর্থিত। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত। আপনারা দেখেন, কারা তাদের সাড়া দেয়।’

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে এখানে ভোট গ্রহণ করা হবে। ২১ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ২৩ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং ৩০ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।

আরও পড়ুন