শরীয়তপুর–২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীমের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লব আজ মঙ্গলবার নড়িয়া থানায় মামলাটি করেন।
ওই মামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকতের ১৪ সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকায় এ সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লব, পৌর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় মীর আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর দুই পক্ষের সাতটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকালে নড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানা নিয়ে শরীয়তপুর–২ আসন। এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ শওকত আলী। এ ছাড়া আরও আট প্রার্থী এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নড়িয়া থানা সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লবসহ কয়েকজন নড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে যান। তখন ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী ও তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় খালেদ শওকত আলীর সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলা চালান। তখন দুই পক্ষের মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনার পরে রাতে ফতেজঙ্গপুর, সোনার বাজার ও পাইকপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। আর বাঁশতলা, কেদারপুর, চণ্ডিপুর ও হালইসার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের চারটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লবের মাথা ফেটে যায়। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় মীর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ওই তিন নেতাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আর ওই ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকতের সমর্থক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হারুন খলিফা ও যুবলীগ কর্মী আরিফ হোসেন আহত হয়েছেন বলে খালেদ শওকত দাবি করেছেন।
সংঘর্ষের ঘটনার পরে রাতে ফতেজঙ্গপুর, সোনার বাজার ও পাইকপাড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তিনটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে। আর বাঁশতলা, কেদারপুর, চণ্ডিপুর ও হালইসার এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের চারটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান বিপ্লব প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদ শওকত আলীর উপস্থিতিতে তাঁর কর্মী হারুন খলিফা ও আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে আমাদের ওপরে হামলা করা হয়েছে। আমাদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির ইন্ধনে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন। তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেদ শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি বিপ্লবের নেতৃত্বে নৌকার কয়েকজন সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালান। ওই ঘটনায় আমার কর্মীরাও আহত হয়েছেন। আমিও আইনগত পদক্ষেপ নেব। আর আমার কর্মীদের ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি।’