চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা বন্যার্তদের জন্য দিল খুদে শিক্ষার্থীরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে বড় একটি মাটির ব্যাংক। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এখানে জমা করে তারা। এর নাম রাখা হয়েছে ‘সঞ্চয় ব্যাংক’।
এ ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে সহপাঠী, সহপাঠীর পরিবারের সদস্য বা এলাকার দুস্থ মানুষের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য সহায়তা দেওয়া হয়। এবার শিশুরা ফেনী, কুমিল্লাসহ ১১ জেলায় বন্যার্তদের জন্য গঠিত প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলের জন্য মাটির ব্যাংকটি তুলে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খুদে শিক্ষার্থীদের হাত থেকে মাটির ব্যাংকটি গ্রহণ করেন বন্ধুসভার মাশরুবা খাতুন, মো. মঈন ও আল মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন, সহকারী শিক্ষক যোবেদা খাতুন, ফারজানা ইয়াসমিন, সাবিহা আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন জানান, মাটির ব্যাংক থেকে কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থীর বাবাকে চিকিৎসার জন্য সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। ব্যাংকে বেশি জমা ছিল না। গত রোববার সবাইকে বলা হয়েছিল বাড়ি থেকে যে যার সাধ্যমতো টাকা আনতে। সেই আহ্বানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখে তিনি অভিভূত।
প্রধান শিক্ষক বলেন, টিফিনের সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং ওই টাকা দিয়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব তৈরির জন্য বিদ্যালয়ে মাটির ব্যাংক চালু করা হয় ২০১৮ সালে। এবার বন্যার্তদের জন্য দেওয়া হলো ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শিক্ষকদের চার হাজার টাকা রয়েছে। ২০২২ সালে সিলেটের বন্যার্তদের জন্য মাটির ব্যাংক থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে সহায়তা দেওয়া হয়। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো দুস্থ মানুষকে সহায়তা দেওয়া হলো মাটির ব্যাংক থেকে।
তৃতীয় শ্রেণির তাসফিয়া হাসান উপবৃত্তির পাওয়া ৯২০ টাকা এই ত্রাণ তহবিলে দেয়। মা-বাবার অনুমতি নিয়েছে কি না জানতে চাইলে তার মা বলেন, ‘তাসফিয়া বাড়িতে এসে বলে বন্যার্তদের সাহায্য করতে চায়। তাকে ১০০ টাকা দিই। সে বলে, এত অল্প টাকা দিতে চায় না। উপবৃত্তির ছয় মাসের সব টাকা (৯২০) দিতে চায়। তাকে সব টাকাই দিয়ে দিই। মেয়ে আমার মানবিক মানুষ হতে শিখেছে জেনে মনে খুব আনন্দ হয়েছে।’
তাসফিয়া প্রথম আলোকে বলে, ‘টিভিতে বন্যার খবরে দেখি মানুষের কষ্ট। সেখানে শিশুদেরও দেখে মনে খুব কষ্ট লাগে। তাই উপবৃত্তির সব টাকা দিয়েছি।’