‘বাবা নেই, এখন তাসনিমও নেই’, মাইলস্টোনের নিহত শিশুটির জন্য গ্রামের মানুষের আহাজারি

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিয়া তাসনিমছবি: সংগৃহীত

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামে নজরুল ইসলামের বাড়ির সামনে বিশাল একটি পাকুড়গাছ। সেই গাছের নিচে জড়ো হয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সবার চোখে জল। সেখানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত লাশবাহী গাড়িতে আছে মাহিয়া তাসনিম ওরফে মায়ার মরদেহ।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হয় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিয়া তাসনিম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। আজ শুক্রবার সকালে তার মরদেহ আনা হয় নানা নজরুল ইসলামের বাড়িতে।

মাহিয়া তাসনিমের ফুফাতো ভাই মাহাদি তাসিম রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, তাসনিমের বাবা মোহাম্মদ আলী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কড়ুলগাছি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি প্রকৌশলী ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। ঢাকার উত্তরায় নিজেদের বাসায় থাকতেন তাসনিমের মা আফরোজা খাতুন ও দুই মেয়ে। তাসনিম ছিল বড়। ছোট মেয়ে মালিহা তাবাচ্ছুম নুসরাতের বয়স ছয় বছর। তাসনিম পড়াশোনা করছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে।

মাহিয়া তাসনিমের মরদেহ দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও এলাকার মানুষ। আজ শুক্রবার সকালে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

তাসনিমের ফুফু রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার পরে ভাবি আফরোজা খাতুন দুই মেয়েকে নিয়ে উত্তরায় এলাকায় থাকেন। যুদ্ধবিমানটি বিদ্যালয়ে বিধ্বস্ত হলে তাসনিম আমাকে প্রথমে ফোন করে জানায়। পরে আমি ও ভাবি বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারি, তাসনিমকে নেওয়া হয়েছে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সে মারা যায়। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।’

আরও পড়ুন

নাতনির মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন নানা নজরুল ইসলাম। কথা বলার সময় বারবার কেঁপে উঠছিল তাঁর কণ্ঠ। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেটি আমেরিকায় থাকে। বড় মেয়েটি তাসনিমের আম্মু, আফরোজা খাতুন। তাসনিম কয় দিন পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে। কিন্তু শরীরের বেশির ভাগ পুড়ে যাওয়ায় বাঁচতে পারেনি। আমার মেয়েটি স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে জীবন চালিয়ে যাচ্ছিল। এখন আরেক শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই শোক থেকে কীভাবে উঠবে?’

আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে জানাজা শেষে জয়পুর গ্রামের কবরস্থানে তাসনিমকে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের জন্য শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে শোক পালন করা হচ্ছে। দেশের মানুষও শোকে স্তব্ধ।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩১ জন, যাদের অধিকাংশই শিশু। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭ জন। এর মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৫ জন, সিএমএইচে ১১ ও শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন।