শরীয়তপুরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত অনুসন্ধানে বসেছে কূপ খননের যন্ত্র

শরীয়তপুরে নড়িয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত অনুসন্ধানে কূপ খনেনর যন্ত্র বসানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার দিনারা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে জানা গিয়েছিল আগেই। ওই স্থানে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাসের মজুত রয়েছে, তা অনুসন্ধানে এবার কূপ খননের যন্ত্র বসানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বিজয়-১০’ নামের ওই যন্ত্রটি বসিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই খননকাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাপেক্স সূত্র জানায়, বিজয়-১০ নামের ওই যন্ত্রটি দুই হাজার অশ্ব ক্ষমতাসম্পন্ন। পাঁচ হাজার মিটার পর্যন্ত গভীরে খনন করতে পারবে এটি। শরীয়তপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১-এর আওতায় এই যন্ত্রের খনন করা কূপের গভীরতা হবে ৩ হাজার ৩০০ মিটার পর্যন্ত। কূপ খননকাজ শুরুর ১০০ দিনের মধ্যে মজুতের পরিমাণ জানা যাবে। অনুসন্ধান সফল হলে ওই স্থানে গ্যাস উৎপাদন ক্ষেত্রের সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হবে।

গ্যাসের মজুতের পরিমাণ জানার জন্য বসানো কূপ খনন যন্ত্রে প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কাজ করছেন। শুক্রবার শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

আজ শুক্রবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিনারা গ্রামের মধ্যে একটি ফসলি জমিতে গ্যাস উত্তোলনের বিভিন্ন অবকাঠামো বসানো হয়েছে। কূপ খননের প্রধান যন্ত্রটি বসানোর পর তাতে প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কাজ করছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব সময় দিলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের যেকোনো দিন ওই প্রকল্পের কূপ খননকাজের উদ্বোধন করা হবে।

বাপেক্স ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন জানায়, ১৯৯৬-১৯৯৭, ২০১৩-২০১৪ ও ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মেঘনা নদীর তীর শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি থেকে খুলনা পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন সমীক্ষা (টুডি সিসমিক জরিপ) করা হয়। ওই জরিপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে সন্ধান মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসের। চলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিদ্ধান্তে তৈরি করা হয় ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প। শরীয়তপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১ নামের প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে।

গ্যাসের মজুত অনুসন্ধান কূপ খনন করার জন্য ৬ দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

অনুসন্ধান কূপ খনন করার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুমদখল নেওয়া হয়েছে। এক বছর সময়ে মাটি ভরাট ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। গত এক মাসে প্রকল্প এলাকায় কূপ খননের যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। বাপেক্সের প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা ওই যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছেন।

শরীয়তপুর অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১-এর ড্রিল ইনচার্জ মুজাহিদ বিন হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের মজুত পরীক্ষা করার জন্য কূপ খননের জন্য আমরা প্রস্তুত। কূপ খননযন্ত্র সফলভাবে স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। যন্ত্রটি দিয়ে মাটির নিচে বিভিন্ন স্তরের গভীরতায় গ্যাস মজুতের পরিমাণ পরীক্ষা করা হবে। গ্যাসের মজুতের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। বাকিটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে।’

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তোফায়েল উদ্দিন সিকদার বলেন, কূপ থেকে পাওয়া গ্যাসের ডিএসটি টেস্ট করা হবে। ওই টেস্ট ও অনুসন্ধান সফল হলে গ্যাসের মজুতের অবস্থা বোঝা যাবে। তখন চূড়ান্তভাবে উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।