ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হচ্ছে কক্সবাজার, ঘর পাচ্ছে আরও ২৬১ পরিবার

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে রামুর মরিচ্যা এলাকায় নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরছবি : প্রথম আলো

কক্সবাজারের তিনটি উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ২৬১টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবার। আগামী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব পরিবারের মধ্যে উপহারের ঘর দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে পুরো কক্সবাজার জেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর আগে কয়েক ধাপে ৪ হাজার ৬৬৪টি ঘর হতদরিদ্রদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়।

শেষ ধাপে বিনা মূল্যে ২ শতক জমিসহ উপহারের পাকা ঘর পাওয়ার আশায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ঈদগাঁও, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরের তালিকাভুক্ত হতদরিদ্ররা।

ঈদগাঁও সদরে দিনমজুরি করে সংসার চালান হোসনে আরা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া এই নারীর ঘরে দুই মেয়ে রয়েছেন। তাঁরাও শারীরিক প্রতিবন্ধী। থাকেন ভাড়া বাসায়। এবার তিনি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর। ঘর পেয়ে খুশি হোসনে আরা (৩৫) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি পাচ্ছি। সেখানে মেয়েরা সুন্দরভাবে থাকার সুযোগ পাবে, পড়ালেখা করতে পারবে। শেখ হাসিনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকার দিনমজুর হোসনে আরা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর
ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি পাচ্ছেন ঈদগাঁও এলাকার দিনমজুর শাকেরা বেগম ও জেলে রবিউল আলম। পাকা বাড়িতে থাকতে পারার সুযোগ পেয়ে তাঁরাও খুশি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও এবং মহেশখালী উপজেলার ২৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারে উপহারের পাকাবাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৭৫, ঈদগাঁওয়ে ১৪৬ ও মহেশখালীতে ৪০টি ঘর রয়েছে। ইতিমধ্যে ২৬১টি ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। এর আগে ঈদগাঁওয়ে ৩১৯, কক্সবাজার সদরে ৫১৯ ও মহেশখালীতে ৩৩১ পরিবারকে উপহারের ঘর হস্তান্তর করা হয়। তিন উপজেলায় আরও ২৬১ পাকাবাড়ি হস্তান্তরের পর ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হবে এই তিন উপজেলা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রমাণ রেখেছেন। এটি অনন্য উদ্যোগ।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৪ হাজার ৯২৫। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম পর্যায়ে (প্রথম ধাপ) ৪ হাজার ৬৬৪ পরিবারে ঘর হস্তান্তর করা হয়। তখন জেলার ছয়টি উপজেলা চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, কুতুবদিয়াকে ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এখন কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও ঈদগাঁওয়ের মাধ্যমে পুরো কক্সবাজার জেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল বলেন, নির্মিত প্রতিটি ঘরের সঙ্গে পরিবারপ্রতি ২ শতাংশ খাসজমি প্রদান করা হচ্ছে। সেই হিসাবে হস্তান্তর করা ঘরের বিপরীতে ১১৩ দশমিক ৭৪ একর জমি বন্দোবস্ত করা হয়েছে, যার মূল্য ১০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোয় প্রায় ৮ দশমিক ৬৫ একর জমি কমন স্পেস হিসেবে উপকারভোগীরা ব্যবহার করছেন। ১ হাজার ৬০৪ জন উপকারভোগীকে হাঁস-মুরগি পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, মাছ, সবজি চাষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।