আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর আদালত বর্জনের কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা। আজ মঙ্গলবার থেকে একটি ছাড়া সব আদালতের বিচারকাজে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। এর ফলে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা অচলাবস্থার অবসান হয়েছে। কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে আদালতপাড়ায়।

আইনজীবীদের বিচারকাজে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনমন্ত্রী যে অনুরোধ করেছেন, তাঁর প্রতি সবাই আস্থা রেখেছেন। আইনমন্ত্রী ও আইনসচিব শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন, বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের অভিভাবক। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস স্থাপন করে আইনজীবীরা আজ থেকে আদালতের বিচারকাজে অংশ নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

একটি বাদে বাকি আদালতগুলোতে ফিরবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা

আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, আইনজীবীরা আদালতে আসতে শুরু করেছেন। জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আগের কর্মব্যস্ততা ফিরেছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে আসামিদের আনা হচ্ছে। আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচতলায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বসে নিজেদের মামলার বিষয়ে আলোচনা করছেন। আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচতলায় ফরম, কোর্ট ফি, যদি জুডিশিয়াল ও নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রি চলছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে বদলি এবং নাজিরের শাস্তির দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা দুই আদালত বর্জন করে আসছিলেন। গত বুধবার থেকে আইনজীবীরা জেলার সব আদালত বর্জন শুরু করেন। যদিও এরই মধ্যে নাজির মো. মুমিনুল ইসলামকে চাঁদপুরে বদলি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচতলায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বসে নিজেদের মামলার বিষয়ে আলোচনা করছেন
ছবি: প্রথম আলো

গত রোববার জেলা সার্কিট হাউসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বিচারক, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনজীবীদের এ–সংক্রান্ত আলোচনা হয়। পরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন, আইনজীবীরা সোমবার আদালতে ফিরবেন। তবে সোমবার আদালতে না ফিরে আইনজীবী সমিতির ভবনের দ্বিতীয় তলায় সাধারণ সভায় বসেন আইনজীবীরা। পরে সাংবাদিকদের জানানো হয়, মঙ্গলবার থেকে আইনজীবীরা বিচারকাজে অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা আদালতে ফিরছেন, জানালেন আইনমন্ত্রী

এদিকে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর আজ বেলা ১১টায় এজলাসে ওঠেন জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার। গত ৩ জানুয়ারির পর আজই প্রথম তিনি এজলাসে ওঠেন। একইভাবে বাকি আদালতগুলোতেও বিচারকার্য শুরু হয়েছে।

বেলা সোয়া ১১টায় জেলা জজ শারমিন নিগারের আদালত থেকে বের হন আইনজীবী তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলা জজ আদালতে জমিসংক্রান্ত একটি মামলার ধার্য তারিখ ছিল আজ। সার্বিক বিষয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে আছেন। তাঁর স্থলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক রবিউল আলম দায়িত্বে রয়েছেন। আইনজীবীরা চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

আইনজীবীদের বর্জনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আরও ৭ আসামির জামিন

আইনজীবী তারেকুল ইসলাম মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে আমার একটি মামলার আজ ধার্য তারিখ। বিচারক ছুটিতে থাকায় তৃতীয় আদালতে এর শুনানি হবে। সেখানে আমি অংশ নেব।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইনসচিব গোলাম সারোয়ার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান হয়েছে। তাঁরা সমাধান করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য আইনজীবীদের সাধারণ সভার দরকার ছিল। সভায় আদালতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতে অচলাবস্থা, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দীদের স্লোগান