করতালি, চিৎকার, সিটিতে ‘তাণ্ডব’ ফিরিয়ে আনল সোনালী টকিজের পুরোনো স্মৃতি
ঈদে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ‘সোনালী টকিজ’ সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে দর্শকদের ঢল নামে। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনের প্রথম শো শুরুর অনেক আগে থেকেই দর্শকেরা হলের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন।
বেলা সাড়ে ১১টা বাজতে না বাজতেই সিনেমা হলের কলাপসিবল গেটের সামনে আসতে শুরু করেন দর্শকেরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গেট খুলে দেওয়া হয়। শুরু হয় টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি। দুপুর ১২টা বাজতেই তরুণ দর্শকেরা দ্রুত শো শুরু করতে হল মালিককে অনুরোধ করেন। তবে হল মালিক জানিয়ে দেন, নির্ধারিত সময়ের বাইরে সিনেমা শুরু করার কোনো সুযোগ নেই।
দর্শকের এমন আগ্রহ ও উন্মাদনা শুধু সিনেমার শো শুরুর সময়ই নয়, সিনেমা চলার সময়েও ছিল চোখে পড়ার মতো। সিনেমা হলের ভেতরে কখনো পিনপতন নীরবতা, কখনো করতালি-চিৎকার আর কখনো ছিল সিটি বাজানো। দর্শকের এমন একাত্মতা যেন ফিরিয়ে এনেছিল সোনালী টকিজের সোনালি দিনগুলোর স্মৃতি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে একটি সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা হয়। নাম দেওয়া হয় সোনালী টকিজ। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারের মাছমহাল এলাকায় সোনালী টকিজ সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আবদুস সামাদ মিয়া। তিনি বাংলাদেশ সিনেমা হল মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
এবার ঈদে শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে সোনালী টকিজে। হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সিনেমা হলে প্রথম, দ্বিতীয়, ডিসি ও ব্যালকনি—এই চার ক্যাটাগরিতে ৬০০ দর্শকের ধারণক্ষমতা আছে। কিন্তু বর্তমানে শুধু ডিসি ও ব্যালকনিতে ১৪০টি টিকিট বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম শো, বেলা সাড়ে তিনটায় দ্বিতীয় শো, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সন্ধ্যা শো এবং রাত সাড়ে ৯টায় নাইট শোতে সিনেমা দেখানো হয়।
সহজ-সরল যুবক থেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা, রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ আর বিচারবহির্ভূত বন্দিশালার মতো সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরেছে ‘তাণ্ডব’।
উপজেলার আঠারোবাড়ি থেকে পাঁচ বন্ধু মিলে ‘তাণ্ডব’ দেখতে আসেন। তাঁদের একজন আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘পুরো সিনেমায় কখনো চুপ হয়ে দেখেছি শাকিবের অভিনয়, আবার কখনো নিজের ভেতরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।’ পাশের উপজেলা গৌরীপুর থেকে আসা আরেক দর্শক আবদুল হালিম বলেন, ‘প্রতিনিয়ত শাকিব খানকে নতুনভাবে দেখছি আমরা। তাঁর অভিনয় মুগ্ধ হওয়ার মতো। শাকিবের কোনো সিনেমা মিস করি না। এবারের “তাণ্ডব” সেরা হয়েছে।’
সোনালী টকিজের পরিচালক এ কে এম হারুনর রশিদ বলেন, ‘সারা বছর দর্শকের অপেক্ষায় বসে থাকি, কিন্তু কোনো দর্শক পাওয়া যায় না। ঈদ ছাড়া দর্শক হয় এক-দুজন। শুধু ঈদ এলে দর্শক আসে, তা–ও শাকিব খানের সিনেমা দেখানো হলে।’
ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রথম শো থেকেই সোনালী টকিজে ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলেছে। তরুণদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা ছিল দর্শকসারিতে। ছবির শেষ দৃশ্যে যখন জানানো হয়, ‘তাণ্ডব-২’ আসছে, তখন পুরো হল হর্ষধ্বনি আর করতালিতে ফেটে পড়ে।