জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলা-মারধর, অভিযোগ জামায়াতের ‘স্বঘোষিত নেতার’ বিরুদ্ধে
রাজশাহীর বাগমারায় জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হিন্দু পরিবারের কয়েক সদস্যকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জামায়াতের স্থানীয় এক কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ঘটনাটি এক সপ্তাহ আগের বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য উত্তম কুমার দাস থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি তাহেরপুর পৌরসভার জেলেপাড়ার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মেহেদি খাঁ। তিনিও একই এলাকার বাসিন্দা। ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে মেহেদি খাঁকে তাহেরপুর পৌর শাখা জামায়াতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্রেটারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জামায়াতের উপজেলা শাখার নেতারা জানিয়েছেন, মেহেদি খাঁর দলীয় কোনো পদে নেই।
লিখিত অভিযোগে উত্তম কুমার দাস উল্লেখ করেন, ২১ অক্টোবর বেলা দেড়টার দিকে পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষ মেহেদি খাঁর নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁদের মেয়ে এগিয়ে গেলে তাঁকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তাঁরা বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উত্তম কুমারের দাবি, তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য প্রভাবশালী মেহেদি খাঁ এ হামলা চালিয়েছেন। এখনো ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
একই এলাকার বাসিন্দা ও বাগমারা উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক (আর্ট বাবু) ওই ভিডিও নিজের ফেসবুকে যুক্ত করে লেখেন, ‘তাহেরপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সেক্রেটারির হাতে আমাদের এলাকার এক হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাকে নির্মমভাবে মারধরের ঘটনাটি আমরা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখেছি। এমন ঘৃণ্য, অমানবিক ও সাম্প্রদায়িক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এলাকাটির কয়েকজন বাসিন্দা মারধরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তি (মেহেদি খাঁ) জামায়াতের স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের দাবি, মেহেদি খাঁকে তাঁরা তাহিরপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সেক্রেটারি হিসেবে জানেন এবং তিনি নিজেও এই পরিচয় দেন। তাঁর বাড়ির পাশে ওই হিন্দু পরিবারটির বসবাস। জমিজমা নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেহেদি খাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জামায়াতের বাগমারা উপজেলা শাখার সেক্রেটারি অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে, তাঁর (মেহেদি খাঁ) সাংগঠনিক পদে নেই, সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
আগামীকাল শনিবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সুরাহা করা হবে বলে জানিয়েছেন তাহেরপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক সোহায়েল রানা। তিনি বলেন, ‘জামায়াতের স্থানীয় আমির আমাকে জানিয়েছেন, মেহেদি খাঁকে গত বছরের ৫ আগস্টের পর মৌখিকভাবে ওই ওয়ার্ডের সেক্রেটারি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তিনি নিষ্ক্রিয় থাকায় লিখিতভাবে পদ দেওয়া হয়নি।’