বগুড়ায় পুলিশের বাধায় খেলার মাঠে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পণ্ড
বগুড়া শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে। ওই মাঠে সমাবেশ করতে না পেরে পরে শহরের সড়কে সড়কে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছেন নেতা-কর্মীরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল সমাবেশ হয় নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। এদিকে শহরের কয়েকটি প্রবেশপথে সমাবেশে যোগ দিতে আসা মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া জেলা বিএনপি শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বেলা ১১টায় সমাবেশ আহ্বান করে। খেলার মাঠের এই সমাবেশ থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ছিল। পূর্বঘোষণা মোতাবেক শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সকাল ১০টা থেকে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জমায়েত হতে থাকেন। কিন্তু সদর থানা ও সদর ফাঁড়ি পুলিশ এবং জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্য আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে অবস্থান নিয়ে নেতা-কর্মীদের জমায়েতে বাধা দেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিতণ্ডা বাধে পুলিশের।
একপর্যায়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিমের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতারা সেখানে পৌঁছে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা খেলার মাঠে সমাবেশে বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চান। দীর্ঘক্ষণ পুলিশের সঙ্গে কথা বলেও নেতারা মাঠে সমাবেশ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পুলিশি বাধায় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে সমাবেশ করতে না পেরে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের দিকে রওনা দিলে পুলিশ সেখানেও আরেক দফা বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নওয়াববাড়ি সড়ক, সার্কিট হাউস সড়ক ও রোমেনা আফাজ সড়কের ঘোড়া মোড়ে অবস্থান নেন। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেতা-কর্মীরা এসে সড়কে সড়কে সমাবেশ করেন।
জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল সমাবেশ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জমান তালুকদার, বগুড়া-৬ আসনের দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলুল বারী তালুকদার, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বলেন, আজ সকালে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে সমাবেশ করার বিষয়টি জানিয়ে আগেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে গতকাল বুধবার রাতের বেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, খেলার মাঠে কোনো ধরনের জমায়েত হওয়া যাবে না। সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে যোগ দিতে আসেন। পুলিশ বনানী মোড়ে, তিন মাথা রেলগেট মোড়ে, চারমাথা মোড়ে, মাটিডালি মোড়ে ছাড়াও শহরের সব কটি প্রবেশমুখে মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশের বাধায় নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফিরে গেলেও শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মহল্লা থেকে মিছিল নিয়ে সকাল ১০টা থেকে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে আসতে থাকেন। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ রণসজ্জায় অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের খেলার মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে মারমুখী আচরণ করে।
জানতে চাইলে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, গত ১৯ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারামারি ও হাঙ্গামা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে খেলার মাঠে সমাবেশ না করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে বলা হয়। সড়ক বন্ধ করে বিএনপি এই সমাবেশ করায় মানুষের দুর্ভোগ হলেও কোনো ধরনের হাঙ্গামা হয়নি। ভবিষ্যতে সড়কের বদলে এ ধরনের কর্মসূচি অন্য কোথাও আয়োজনে আয়োজকদের পরামর্শ দেওয়া হবে।