সবচেয়ে কম সময়ে রেকর্ড বৃষ্টিতে সিলেটে জলাবদ্ধতা: মেয়র আরিফুল হক

জলাবদ্ধতা নিরসন–সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরে সম্প্রতি কম সময়ে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে নগরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি নিজেও ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন শাখার ৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনিসহ কাউন্সিলররাও জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে মাঠে রয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত জলাবদ্ধতা নিরসন–সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই সিলেটে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৬ জুলাই রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে এক ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই দিন রাতে ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। এতেই নালা–নর্দমায় পানি নামতে না পেরে নগরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী কম সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ডের বিষয়টা তুলে ধরেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিলেট নগরের অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিষয়ে যে সমালোচনা হয়েছে সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজের এক হাজার ২২৮ কোটি টাকার অপরিকল্পিত উন্নয়ন জলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে সেটি সঠিক নয়। এই টাকা সিটি করপোরেশন এখন পর্যন্ত পায়নি। সরকারি বরাদ্দের মধ্যে মাত্র ৩২৯ কোটি টাকা সিটি করপোরেশন পেয়েছে। সেটির উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। তবে ঢালাওভাবে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার কথা বলা হচ্ছে সেটি সঠিক নয়।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কিংবা মনগড়াভাবে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে এমনটি নয়। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। তবে এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর দুই মাস আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কিছু কাজ বাকি রয়েছিল। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ না হওয়ায় কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

ময়লা–আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলার কারণে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে দাবি করে মেয়র বলেন, ছড়া–খালের পানি নদীর পানির সঙ্গে একই অনুপাতে থাকায় পানি নামতে পারছে না। এ ছাড়া বাসিন্দারা গৃহস্থালির ময়লা–আবর্জনা ছড়া, খালে ফেলছেন। এতে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার ময়লা–আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার কথা বলা হলেও সেটি কেউই মানছেন না। এবার জরিমানা চালু করার কথা চিন্তা করছেন বলেও জানান তিনি।

তবে জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা স্বীকার করে মেয়র বলেন, ‘স্বীকার করতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর এলাকার রোডে জলাবদ্ধতা, তা আমাদের উন্নয়নকাজ চলাকালীন আগাম বৃষ্টি চলে আসায় সৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় দলদলি বাগানের টিলা ধসে পড়েছে। এ ছাড়া নগরের পূর্ব দরগাহ গেট এলাকায় ছড়ার ওপর টিলাধসে প্রতিবন্ধকতার তৈরি হয়েছে। এতে পলিমাটিতে নর্দমা ভরে গেছে। ছড়া-খাল বা ড্রেনের গভীরতা ছিল, তাই একটানা বর্ষা মৌসুমে আমরা এগুলোতে কাজ করতে পারিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানসহ কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।