ধর্ষণে জড়িতদের শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে অবরোধ চলছে

‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে আজ বুধবার তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকেছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ পাঁচ দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের তৃতীয় দিন চলছে। এর মধ্যে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তদন্ত চলাকালে ঘটনায় সহায়তার অভিযোগে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতির দাবিটি রয়েছে।

গত সোমবার সকাল পৌনে নয়টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ শুরু করা হয়। আজ বুধবার সকাল নয়টা থেকে তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি চলছে। অবরোধের এই তিন দিন উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক ভবনের কোনো কর্মকর্তাকে ভবনটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের প্রশাসনিক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আছে—পড়ালেখা শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বহিষ্কারাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি ও অফিস আদেশ প্রণয়ন, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের দুটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি সোহেল আহমেদও আছেন। ফটকের একপাশে ‘ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ এবং অন্য পাশে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং পাঁচটি দাবি লেখাসংবলিত ব্যানার টাঙানো। এ সময় কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ভবনের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

অবরোধে অংশ নেওয়া বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বিরুদ্ধে এর আগে অনেক ধরনের অভিযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থীরা মাদক বহন করেছিলেন। সেটা তিনি (প্রক্টর) ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন, সেটিও তিনি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।

শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, নিপীড়নের দায়ে বরখাস্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটিও ভুক্তভোগীকে দিয়ে দায়মুক্তিপত্র লেখানোর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণের ঘটনায় তিনি প্রথমে বলেছিলেন, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর তাঁর হেফাজতে রয়েছেন। পরে তিনি (প্রক্টর) জানান, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর পালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও দায়িত্বে অবহেলার বিষটি তাঁরা উপাচার্যের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগ সত্য হওয়ার সাপেক্ষে তাঁর অব্যাহতি দাবি করছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মো নূরুল আলম ও রেজিস্ট্রার আবু হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলমান রয়েছে। উপাচার্যের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসতে চান, তবে সেটি প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে। আমরা জানিয়েছি, একটি আন্দোলন চলছে, এর মধ্যে কীভাবে প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বিভিন্ন জায়গা রয়েছে, সেখানে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তিনি সেসব জায়গায় আলোচনায় বসবেন না। তিনি গোঁ ধরে বসে আছেন, প্রশাসনিক ভবনেই বসতে চান। তাহলে বলা যেতেই পারে, তিনি সমাধান চাইছেন না।’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে হলসংলগ্ন পাশের জঙ্গলে নিয়ে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি মামলা করেন।

আরও পড়ুন