চুরির অভিযোগে সালিসের পর গাছে ঝুলছিল যুবকের লাশ
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের প্রকল্প বাজার এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ওই তরুণের নাম মো. জাফর (১৮)। তিনি ওই এলাকার জাকের হোসেনের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাফরের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে প্রকল্প বাজার এলাকায় সালিস বসান স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। এরপর সকালে বাজারের পাশের একটি গাছে জাফরের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
নিহত জাফরের পরিবারের দাবি, চুরির অভিযোগে তুলে নির্যাতন করে জাফরকে হত্যা করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ জানায়, মো. জাফর উপজেলার চানন্দী ইউনিয়ন বিএনপির পশ্চিম শাখার সভাপতি মো. সোহেল মাহমুদের বাড়িতে মাসিক চুক্তিতে কাজ করতেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি এ কাজ নেন। তবে পাঁচ দিন আগে হঠাৎ কাজ ছেড়ে চলে যান জাফর। সোহেল মাহমুদের অভিযোগ, জাফর তাঁদের বাড়ি থেকে আলমারির চাবি, মুঠোফোনের চার্জার ও কিছু টাকা চুরি করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চুরির অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় হরণী ইউনিয়নের আলী বাজার এলাকা থেকে জাফরকে ধরে নিয়ে যান সোহেল মাহমুদ। পরে তাঁকে প্রকল্প বাজার এলাকায় নিয়ে সালিস বসানো হয়। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সামনে জাফরকে চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জাফরের বাবা জাকের হোসেনকেও সেখানে ডাকা হয়। একপর্যায়ে জাকের হোসেন ছেলেকে রেখেই বাড়িতে চলে যান। স্থানীয় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীও তখন বাজারে উপস্থিত ছিলেন। পরে সকালে জাফরের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
নিহত জাফরের বাবা জাকের হোসেনের অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে চুরির অভিযোগে আটক করে সালিসে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বাজারে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন; কিন্তু দেওয়া হয়নি। এরপর তাঁর ছেলেকে মেরে লাশ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা সোহেল মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাফর তাঁর বাড়ি থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রসহ টাকা চুরি করেছেন। রাতে জাফরের দেখা মেলায় তাঁকে প্রকল্প বাজারে নিয়ে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
জানতে চাইলে উপজেলার মোর্শেদ বাজার তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে জাফরকে আটক করে প্রকল্প বাজারে সালিস বৈঠক বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জাফর চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, নিহত জাফরের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত নই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।