বাণিজ্য মেলায় এখনো চলছে স্টল নির্মাণের কাজ, ক্রেতার আনাগোনা কম

২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্য মেলার সব স্টলের নির্মাণকাজ শেষ করার ছিল। তবে উদ্বোধনের পর ৪ দিন পার হলেও এখনো অনেক স্টলের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। গতকাল বুধবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনের পর চার দিন পার হলেও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (ডিআইটিএফ) এখনো চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। এ ছাড়া মেলায় এখনো আশানুরূপ ক্রেতার সমাগম হচ্ছে না বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা। গত রোববার বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর বসেছে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি)।

গতকাল বুধবার বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল, অন্তত নয়টি স্টলের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী ও বৈদ্যুতিক তার। এর মধ্যেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তবে বেশির ভাগ স্টলে বিক্রেতারা ক্রেতার অপেক্ষায় অলস সময় কাটাচ্ছেন।

বিবিসিএফইসির পশ্চিম পাশের ফটক ধরে মূল হলে ঢুকতে দেখা গেল, ফটকের দুই পাশে তিনটি স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। পাশেই ভারতের কাশ্মীর থেকে চাদর নিয়ে মেলায় আসা বিল্লাল খান তাঁর বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে অলস বসে আছেন। বাংলা ও হিন্দির মিশ্রণে বিল্লাল যা বললেন, তাতে হতাশা ঝরল।

বিল্লাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। এখনো আশাহত হইনি। তবে এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। পাশেই দুটি দোকানের কাজ চলছে। এ জন্য মনে হয় ক্রেতা পাচ্ছি না।’

পাশের স্টলের নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা মো. আল আমিন বলেন, মেলা শুরুর পর রোববার তাঁরা স্টলের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। কাজ শেষ হতে আরও দুই দিন লাগবে। এত দেরিতে কাজ শুরুর কারণ জানতে চাইলে বলেন, এটা দোকানের ইনচার্জ বলতে পারবেন।

এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন
ছবি: প্রথম আলো

পরে স্টলের ইনচার্জ জাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে দোকান (স্টল) পাইনি। মেলা শুরুর দিন এসে দেখি, এখানে জায়গা খালি আছে। পরে তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে দোকান নিয়েছি।’

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড থেকে মেলায় আসা বেস্ট ওয়ান নামের একটি ব্লেজার বিক্রয়কারী স্টলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বিবিসিএফইসির স্থায়ী হলের ভেতর কথা হয়। আশরাফুল বলেন, আট বছর ধরে তিনি বাণিজ্য মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তবে এত দিনের মধ্যে এবারের মেলা শুরুর অভিজ্ঞতা সবচেয়ে খারাপ। সকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮–১০ জন ক্রেতা দোকানে এসেছেন। মাত্র দুজন ব্লেজার কিনেছেন। আগামী শুক্র ও শনিবার থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

ক্রেতাসমাগম কম কেন জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, ঢাকা থেকে দূরত্ব বড় বিষয়। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীত। আবার মাসের শুরু। এ জন্য ক্রেতাসমাগম কম মনে হচ্ছে। এখনো মেলার ভেতর কোনো কোনো স্টলের নির্মাণকাজ চলছে। এটা ক্রেতাদের ভালো বার্তা দিচ্ছে না।

মেলায় এখনো আশানুরূপ ক্রেতার সমাগম হচ্ছে না বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার শেরেবাংলা নগর থেকে মেলায় পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন ব্যবসায়ী মাহমুদুর রহমান। দীর্ঘদিন শেরেবাংলা নগরে মেলার আয়োজন দেখেছেন তিনি। নতুন স্থানে মেলার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলেন, ‘মেলার আয়োজন অপরিপূর্ণ মনে হয়েছে। কোথাও কোথাও বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শিশুদের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আবার মেলা প্রাঙ্গণের বাইরের সড়কে সড়কবাতি নেই, সড়কজুড়ে ধুলা। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে হয়তো এত দূরে আসা হতো না। তবে এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরের পরিবেশ খুবই আরামদায়ক মনে হয়েছে।’

মেলার পরিচালক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে স্টলের নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ব্যবসায়ীদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন স্থান হওয়ায় অনেকে দেরিতে মেলায় এসেছেন। এ জন্য দু–একটা স্টলের কাজ শেষ হয়নি। ধুলা নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।